Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দেশের নদী পরিবেশের কিছুটা উন্নতিতেও আরও ৫-৬ বছর লাগবে’

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মার্চ ২০২১ ২২:২৫

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন নদীর অবস্থা ভালো পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার যেসকল উদ্যোগ বা প্রকল্প নিয়েছে তা সময়মত বাস্তবায়িত হলেও আগামী ৫-৬ বছর লাগবে অন্তত কিছুটা উন্নতি হতে। দূষণ, দখল আর অসচেতনতার কারণে নদীগুলোর বেহাল অবস্থা এই পরিস্থিতির মূল কারণ।

সোমবার (৩০ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) গণসংগীত এবং নৌর‍্যালির আয়োজন করে। নৌর‍্যালিটি ঢাকার সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে নৌপথে গাবতলি গিয়ে শেষ হয়। সেসময় বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক একান্ত আলাপচারিতায় প্রতিবেদককে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

সদরঘাট থেকে নৌপথে গাবতলি পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, মাঝে বুড়িগঙ্গার পানিতে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও এখন আবার কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে এবং দুই পাড় জুড়েই ময়লা আর ময়লা। এর মাঝেই চলছে পারাপার। দুই পাড়জুড়েই একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সুয়ারেজের বর্জ্য নদীতে পড়ছিল। এছাড়া নদীর জায়গাতে ট্রাকস্টান্ড, ইটের ভাটা, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ব্যক্তিগত অবকাঠামো দেখা গেছে।

বুড়িগঙ্গার এই সার্বিক চিত্র দেখতে দেখতে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের কাছে প্রতিবেদক জানতে চান যে, ‘আজকের বিকেলটি কেমন লাগছে?’

জবাবে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘আমাদের নদীমাতৃক দেশ, নদীতে ভ্রমণ করব এমনটাই কাম্য। কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি আমাদের এই নদীর দুই পাড় জুড়েই ময়লা, নদীর বিভিন্ন জায়গা দখল হয়েছে, নদীর নাব্যতা রক্ষা যাচ্ছে না। নদী বিষয়ে প্রকৃত অর্থে অনেক কিছু করার আছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমার উপলব্ধি হচ্ছে যে আমরা যদি নিয়মিত নদীতে ভ্রমণ করি, নদীরে দুই পাড়ের বাসিন্দারা যদি সহযোগিতা করে, নদীভিত্তিক বাণিজ্য বা যারা নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে পারলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ তার আগের রূপ ফিরে পাবে।’

বুড়িগঙ্গায় নদীর জায়গা দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে অবৈধ দখলের পরিমাণ এখন খুবই কম। বেশিরভাগ দখলই উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি। উচ্ছেদ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণ সহযোগিতা করেছে। যারা নদী এবং পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করছে তাদেরও সহযোগিতা পাচ্ছি।’

নদী রক্ষায় সরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, প্রতি বছর বাজেটেই নদী রক্ষায় বরাদ্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও নদীর অবস্থা করুণ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘সমস্যা হলো বাজেটের থেকে আমাদের সচেতনতা বাড়ানো বেশি প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, নদী আমাদের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রতিটা মানুষের উপলব্ধি করা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থায় নদী নিয়ে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয় থাকা প্রয়োজন। যে বিষয়টা পীড়া দিচ্ছে তা হল আমরা মুখে যা বলছি বাস্তবে তা করছি না। তাই সমাজকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।’

নদী পরিবেশের কিছুটা উন্নতিতেও আরো ৫-৬ বছর লাগবে জানিয়ে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘সরকার কিছু পরিকল্পনা করেছে, আমরা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পথচলার যে পরিকল্পনা তা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তবে আগামী ৫-৬ বছরে কিছুটা উন্নতি দেখতে পারবেন। তবে মূল সমস্যা সমাধানে আরও অনেক সময় লাগবে। কেননা মানুষের অভ্যাস ধীরে ধীরে বদলাবে।’

নদী রক্ষায় মূল বাধা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাধা পাচ্ছি মানে আমাদের উদ্যোগের অভাব। এক জায়গা পরিস্কার করলাম, কিন্তু তারপরই সাধারণ মানুষ লঞ্চ থেকে ময়লা ফেলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প বর্জ্য আমাদের নদীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে এই শিল্প বর্জ্য বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর থেকে অভিযান চালানো হলেও তেমন উন্নতি হচ্ছে না। কেননা অভিযান বন্ধ হলেই নদীতে আবার শিল্প বর্জ্য ফেলা হয়। তো আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়েই যাবো। আশা করব এভাবেই একসময় মানুষ সচেতন হবে এবং আমরা দূষণমুক্ত নদী পাব এবং মানুষের অভ্যাস বদল হবে।’\

নদী রক্ষায় টেকসই সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘টেকসই সমাধান হচ্ছে কাজ করতে থাকা। মানুষকে ক্রমাগত সচেতন করা।’

কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এবং কর্ণফুলি নদী নিয়ে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত হয়েছে। এখন আমরা মেঘনা নদী নিয়ে কাজ করছি। এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ৪টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরকারের ৪টি দফতর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন একসঙ্গে নদী রক্ষায় কাজ করছে। সুতরাং, আমরা যদি স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করতে পারি, তাহলে অবশ্যেই আমরা অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’

সারাবাংলা/জেআইএল/এসএসএ

টপ নিউজ দেশের নদী পরিবেশ বিআইডব্লিউটিএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর