১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়
২৭ মার্চ ২০২১ ০৮:৫৮ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ১১:২৭
ঢাকা: ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় কোনো আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য হলে ৩৪২ ধারায় নির্দোষ দাবি করে তা প্রত্যাহারের আবেদন আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয় এবং আইনের দৃষ্টিতে আসামিদের আবেদন মূল্যহীন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গত বছরের ২১ অক্টোবর এ রায় দেওয়া হলেও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে ২৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কামরাঙ্গীরচর থানায় করা সকিনা বেগম ও সোহেল হত্যা মামলায় এ রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, এটি প্রতিষ্ঠিত নীতি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছা প্রণোদিত ও সত্য হলে সাজা দেওয়ার জন্য অন্য কোনো সমর্থক সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন নেই। এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষীও নেই। এখানে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র ভিত্তি হলো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। এ মামলায় দুই আসামি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তা স্বেচ্ছা প্রণোদিত ও সত্য। এ কারণে হাইকোর্ট সঠিকভাবেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
আদালত বলেছে, এই মামলায় স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বক্তব্য দেওয়ার সময় নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেছে। তারা বলেছেন যে, পুলিশ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। তারা নির্দোষ।
আদালত বলেন, ‘কিন্তু স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। সুতরাং তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই ৩৪২ ধারার সময় নির্দোষ দাবি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এ আবেদন আইনের দৃষ্টিতে মূল্যহীন।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মা সখিনা বেগম ও ছেলে সোহেলকে হত্যার অভিযোগে শেফালী বেগম ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থানায় আফসার আলী শেখসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ মো. আফসার আলী শেখকে গ্রেফতার করে। আফসার আলী শেখের তথ্যের ভিত্তিতে মো. আব্দুল মান্নান, নুর আলম, মো. আবুল হোসেন ও মাইকেল ফারুককে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে আফসার ও মান্নান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পুলিশ তদন্ত শেষে ওইবছরের ১৯ এপ্রিল ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
এ মামলায় বিচার শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে ৫ আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী আফসার শেখ ও আব্দুল মান্নানের মৃত্যুদণ্ড বহাল আর অন্য তিন আসামিকে খালাস দিয়ে ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর রায় দেন। এ রায়ের পর আফসার শেখ ও আব্দুল মান্নান আপিল বিভাগে ২০১২ সালে আপিল করেন। তাদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে গতবছর ২১ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে