‘বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অগ্রযাত্রা পুরো অঞ্চলের উন্নয়নে সমান জরুরি’
২৬ মার্চ ২০২১ ১৯:০৫ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০০:০০
ঢাকা: দুই নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অগ্রযাত্রা দক্ষিণ এশিয়ার পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যেকার সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের মতো চ্যালেঞ্জগুলোও একসঙ্গে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বে অন্তর্ভুক্ত’ করার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী ও ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তির এই সময়ে তিনি বাংলাদেশের সবাইকে অভিনন্দন জানান।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটি একটি আনন্দময় কাকতালীয় ঘটনা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর আর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর একসঙ্গে পড়েছে। আমাদের দুই দেশেরই জন্য একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নেরও অংশীদার। আমরা লক্ষ্যও ভাগাভাগি করি, চ্যালেঞ্জগুলোও ভাগাভাগি করি।
আরও পড়ুন- ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সমান ব্যাকুলতা ছিল ভারতেও’
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে— বাণিজ্য ও শিল্পে যেখানে আমাদের জন্য একই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি সন্ত্রাসবাদের মতো সমান বিপদও রয়েছে। এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলীর পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে। আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং ওদের মোকাবিলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে, এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অগ্রযাত্রা পুরো অঞ্চলের উন্নয়নে সমান জরুরি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, আজ ভারত ও বাংলাদেশ দু’টি দেশের সরকারই এই সংবেদনশীলতা উপলব্ধি করছে আর সেদিকেই অর্থবহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রমাণ করেছি যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা থাকলে সব সমস্যারই সমাধান করা যায়। আমাদের স্থল সীমান্ত চুক্তি এর সাক্ষী। করোনার এই দুঃসময়েও দু’টি দেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রয়েছে। আমরা সার্ক কোভিড তহবিল গঠনে সহযোগিতা করেছি, নিজেদের মানব সম্পদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছি। ভারত খুবই আনন্দিত যে ভারতের তৈরির ভ্যাকসিনগুলো বাংলাদেশের ভাইবোনদের কাজে লাগছে।
বাংলাদেশের তরুণদের ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করার জন্য দু’টি দেশেরই তরুণদের মধ্যে আরও উন্নত যোগাযোগ সমান প্রয়োজনীয়। ভারত-বাংলাদেশ সর্ম্পকের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের ৫০ তরুণ উদ্যোক্তাকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানাতে চাই। তারা ভারতে আসুন, আমাদের স্টার্টআপ আর ইকোসিস্টেম উদ্ভাবনে যোগ দিন, পুঁজিপতি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দেখা করুন। আমরাও তাদের কাছ থেকে শিখব, তারাও শেখার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি, আমি বাংলাদেশি যুবকদের জন্য সুবর্ণজয়ন্তী বৃত্তি ঘোষণা করছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করছে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যিনি সোনার বাংলার স্বপ্নের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। আমাদের ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, আমরা দাতে গান্ধি শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি।
বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলা ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় তিনি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শিক্ষাবিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ, ভাষা শহিদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার ও শফিউরকে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ভাই-বোনদের পাশে থাকা ভারতীয় সেনাসদস্যদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ, জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়ক অ্যালবার্ট এক্কা, গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং, ক্যাপ্টেন মোহন নারায়ণ রাও সামন্তসহ বীর ভারতীয়দের নামও উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই বীরদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিসৌধ উত্সর্গ করেছে। আমি এই জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আনন্দিত যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অনেক ভারতীয় সেনাও এখানে এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানিরা নিজ দেশের নাগরিকদেরই হত্যা করছিল। এর মধ্যে এখানে (বাংলাদেশ) ও আমাদের ভারতীয়দের জন্য আশার এক কিরণ দেখা গেল— তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সাহস ও নেতৃত্ব এটা নিশ্চিত করেছিল, কোনো শক্তিই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
জাতির জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই টিকে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে— এমন কোনো শক্তি নেই।’ বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি উদ্ধৃত করে মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধিতাকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল এবং বাংলাদেশের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাসও ছিল। আমি আনন্দিত যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছেলিনে, যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃত করে মোদি বলেন, আমাদের অপচয় করার মতো সময় নেই, পরিবর্তনের জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, এখন আর দেরি করা যায় না। এটি ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। দুই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের জন্য, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের লক্ষ্য এক। তাই আমাদের প্রচেষ্টাও এক হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে, নতুন মাত্রা দিতে হবে, নতুন উচ্চতায় নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ভারত ও বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে একসঙ্গে অগ্রগতি করবে। আপনারা আমার প্রতি যে হৃদ্যতা দেখিয়েছেন, ভারতের প্রতি এই ভ্রাতৃত্ব, আপনাদের আন্তরিকতা আমি প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে পৌঁছে দেবো।
সারাবাংলা/টিআর
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড টপ নিউজ নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী