কাজে আসেনি ৫০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার
২৪ মার্চ ২০২১ ০৯:২৬
বরিশাল: গরম শুরু হওয়ার আগেই বরিশালে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ নগরীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি পানি শোধনাগার (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) নির্মাণ করা হলেও গত পাঁচ বছরেও তা নগরবাসীর কোনো উপকারে আসেনি। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এর অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় একটি শোধনাগারের বেশিরভাগ কীর্তনখোলা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর শোধনাগার দুটি চালু না হওয়ায় গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলায় চাপ বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। দ্রুত পানি সংকট সমাধানে পানি শোধনাগার চালুর দাবি করেছে নগরবাসী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, মহানগরের পলাশপুর ও রূপাতলী এলাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে দুটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পরে বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণে পানি শোধনাগার চালু করা সম্ভব হয়নি। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও এর নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পরে। সেই অজুহাতে পানি শোধনাগার অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এদিকে দ্রুত পানি শোধনাগারে দ্রুত চালুর দাবি করেছে বরিশাল নগর উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধণ সমন্বয় কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু অভিযোগ করে বলেন, নগরের বাসিন্দাদের পানির চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। গরমের শুরুতেই পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। অথচ প্রায় সাড়ে তিন কোটি লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতার পানি শোধনাগার পড়ে আছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন গভীর নলকূপ স্থাপন ও তাতে সাব-মার্সিবল পাম্প লাগানোর অনুমতি দেওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। যার ফলে পানির স্তর নেমে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। নগরের খাল-পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। নগরের অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।
অবিলম্বে পানি শোধনাগার চালু করা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করার দাবি জানান তিনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন পানি বিভাগ জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৬ লাখ বাসিন্দার জন্য পাঁচ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানির দরকার। করপোরেশন থেকে বর্তমানে ২ কোটি ৭ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। দিনে পানির ঘাটতি হচ্ছে তিন কোটি ৩৩ লাখ লিটার। নগরের দুই প্রান্তে দুটি পানি শোধনাগার থেকে দিনে তিন কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব। ওই শোধনাগার চালু হলে পানির চাহিদা পুরণ হওয়ার পরও অতিরিক্ত পানি থাকবে। কিন্তু পানি শোধনাগার দুটিতে নির্মাণ ত্রুটির কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে একটি ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে পানি শোধনাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. ছোহরাব হোসেন পান্না বলেন, নগরীরর পানির চাহিদার অর্ধেক পরিমাণ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। দুই কোটি সাত লাখ লিটার থেকে দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব। বর্তমানে পানির সংকট তেমন একটা তীব্র নয়। তীব্র গরমের আগে একাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নগরের দুই প্রান্তে দুটি পানি শোধনাগার ত্রুটিমুক্ত করে চালু করার জন্য করপোরেশন থেকে একটি ডিপিপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প অনুমোদন হলে পানির সমস্যা থাকবে না।
সারাবাংলা/জিএমএস/এনএস