বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের মমতা শঙ্করের নৃত্যসন্ধ্যা
২১ মার্চ ২০২১ ২২:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জন্মশতবর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে চট্টগ্রামে নৃত্য পরিবেশন করেছেন ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর ও তার দল। গানের তালে অপূর্ব নৃত্যশৈলীতে ভারতের শিল্পীরা মোহাবিষ্ট করে রাখেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিমনা দর্শক-শ্রোতাদের।
রোববার (২১ মার্চ) নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মনোমুগ্ধকর নৃত্য দেখে একটি সন্ধ্যা পার করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত অতিথিরা। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ভারতীয় হাই কমিশন এবং সহকারী হাই কমিশন, চট্টগ্রাম এ আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত-বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে ভারত-বাংলাদেশে সম্পর্ক। এ সম্পর্ক চিরদিন অটুট থাকবে। এ সম্পর্ক কোনোদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। কারণ দুর্দিনে যে বন্ধু হয় তাকে মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারে না। আমরা যখন পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত তখন ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল।’
দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। সেদিন তো হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার রক্তে এ মাটি রঞ্জিত হয়েছিল। তাহলে আজ কেন বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা? আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে আপস করতে পারি না। যে চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই চেতনা আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যতটা শ্রদ্ধার, ভারতের মানুষের কাছেও ততটা শ্রদ্ধার। বঙ্গবন্ধু আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী এবং সাহসী নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের জন্য তার ত্যাগ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশের আজ অনেক অর্জন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি এবং বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বাংলাদেশের অনেক অর্জনে, বিশেষত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের অর্জনে আমরা গর্বিত।’
এরপর ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্কর ও অমলা শঙ্করের মেয়ে মমতা শঙ্করের দলের নৃত্য পরিবেশনা শুরু হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জয়’, ‘আলোর অমল কমল কে ফুটালে’ সলীল চৌধুরীর গান ‘ধিতাং ধিতাং বলে’– বিভিন্ন গানের সঙ্গে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তারা দর্শকের মন জয় করে নেন।
‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি’, ‘বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’- গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা সম্মিলিত এই নৃত্য দেখে মুগ্ধ হন। অনুষ্ঠানে শেষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মমতা শঙ্কর শুধু ভারতের নন, সারাবিশ্বে প্রখ্যাত একজন নৃত্যশিল্পী। তিনি একজন অসামান্য প্রতিভাবান অভিনেত্রীও। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে উনার মতো একজন গুণি শিল্পীর পরিবেশনা এ আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। উনার দলের পারফরম্যান্সের বিষয়ে বলতে গেলে এক কথায়- মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম