সময় এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার: প্রধানমন্ত্রী
১৭ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৮ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০১:০৭
ঢাকা: বাংলাদেশের এখন আর পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে। এখন শুধু আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হলো ১০ দিনের বর্ণাঢ্য আয়োজন।
আরও পড়ুন-
- ভারতীয়দের কাছে বঙ্গবন্ধু একজন বীর: মোদি
- জাতির জনকের স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
- জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রতিজ্ঞা প্রধানমন্ত্রীর
- সেদিন প্রকৃতির নিয়মে সূর্য উঠেছিল, সে সূর্যের নাম শেখ মুজিব
করোনাভাইরাস মহামারির সংক্রমণ পরিস্থিতিতে থমকে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন। জনসমাগম এড়িয়ে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে গত একবছর ধরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল সব আয়োজন। মুজিববর্ষে জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকীকে উদযাপনের রঙে রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণে যখন জাতি, তখনই এই বর্ণাঢ্য আয়োজনের শুরু হলো।
অনুষ্ঠানে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার বর্বরতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এরপর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতিক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময় আমর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। মাথাপিছু আয় সম্মানজনক ২০০০ মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নেমে এসেছে। দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরের উন্নীত হয়েছে। আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি। আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে অবনমন করা বা নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারি অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এই অর্জনকে নসাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই শুভ জন্মদিনে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতা প্রতিহত করে, প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, নিরক্ষতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করব ইনশাল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
অনুষ্ঠান আয়োজন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিদায়ের আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই—
‘চলো যাই, চলো, যাই চলো, যাই—
চলো পদে পদে সত্যের ছন্দে
চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে!
চলো মুক্তিপথে
চলো বিঘ্ন-বিপদজয়ী মনোরথে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণে।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সবাইকে শুভ কামনা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্য শেষ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর তারা সমবেত কণ্ঠে আরও দুইটি গান পরিবেশন করে। এরপর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মুজিব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজন উপকমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথিসহ সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করার আহ্বান করেন। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’। এতে অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে প্রদর্শন করা হয় জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়। মুজিববর্ষের ‘থিম সং’য়ের মিউজিক ভিডিও পরিবেশনার পর বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও প্রচার হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত সম্ভাষণ দেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা’র ধারণ করা ভিডিওবার্তা প্রদর্শন করা হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক মার্ক টালির ধারণকৃত বার্তাও প্রদর্শন হয়।
এর আগে, চীনের রাষ্ট্রদূত দেশটির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে দেন। তার একটি ভিডিও প্রচার করা হয় এই অনুষ্ঠানে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্’র বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকী