আসামির মৃত্যু ও পলায়নে বিপাকে কারা অধিদফতর
৯ মার্চ ২০২১ ২০:৫৪
ঢাকা: কারাগার থেকে একের পর এক আসামি পলায়ন এবং কাশিমপুর কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কারা প্রশাসন। অতীতে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতি আর কখনো তৈরি হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংকট সমাধানে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কারা অধিদফতর। ইতোমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের কারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নানান দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কমিটি। এতে মুশতাক আহমেদের স্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু কারাগার থেকে একের পর এক আসামি পলায়নের বিষয়টি কারা প্রশাসনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। যদিও চট্টগ্রাম জেলা কারাগার থেকে পালানো হাজতি রুবেলকে গতরাতে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরেও স্বস্তির জায়গায় আনতে এবং এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার (৮ মার্চ) ৬৮ কারাগারের জেল সুপারদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আলোচনা হয়েছে কীভাবে এরকম পরিস্থিতি এড়ানো যায়।’
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কারাগারে বন্দিদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য সিসিটিভি ব্যবস্থাকে আরও উন্নত এবং তা ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা নেই সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য বলা হচ্ছে। কারাগারের সীমানা প্রাচীর থেকে পাশ্ববর্তী ভবনের দূরত্ব মেপে সেখানকার দেয়াল আরও উঁচু করার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কারারক্ষীদের কৌশল শেখানোর ব্যবস্থা ও বন্দিদের উপর প্রতি মুহূর্তে নজরদারিও করতে বলা হয়েছে। যেসব কারাগারে কারারক্ষী কম সেখানে কারারক্ষী বৃদ্ধি করে বাউন্ডারি দেয়ালের চারদিকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। সীমানা দেয়াল কাছাকাছি কোনো আসামি যাতে যেতে না পারেন সেজন্য কারারক্ষীদের বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারাগারে বন্দিদের মধ্য থেকে যারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত তাদের আলাদা পোশাক (যাতে সহজে চিহ্নিত করা যায়) পড়ানোর ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবু বকর পালিয়ে যান। ওইদিন সন্ধ্যার আগে আসামি গণনার সময় বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর রাতভর ও পরের কয়েকদিন চিরুনি অভিযান চালিয়েও আবু বকরের হদিস মেলেনি। পরবর্তী সময়ে কারা অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে উঠে আসে কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই আসামি আবু বকর পালিয়ে যায়। আসামি পালানোর ঘটনায় জেল সুপারসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, আবু বকর সিদ্দিক ২০১১ সালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসেছিলেন ফাঁসির আসামি হিসেবে। ২০১২ সালের ২৭ জুলাই আপিলে তার সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার আবাদ চন্ডীপুরে।
এদিকে গত ৬ মার্চ ভোরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসামি গণনার পর লকাপ খুলে দেওয়ার পর হাজতি ফরহাদ হোসেন রুবেল পালিয়ে যায়। আর বিষয়টি ধরা পড়ে সকালে নাস্তার আগে যে গণনা করা হয় তাতে। পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ডেকে রুবেল জীবিত কোথাও লুকিয়ে আছে নাকি মৃত অবস্থায় কোথাও পড়ে আছে সেটি নিশ্চিত হতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের অভিযানে জীবিত কিংবা মৃত কোনো অবস্থায়ই রুবেলকে পাওয়া না যাওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হয়। সেখানে দেখা যায়, হাজতি রুবেল পাশের একটি ভবনের ছাদ দিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কোতয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় ৮ মার্চ দিবাগত রাতে নরসিংদীর রায়পুরা এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়। দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
কারা সূত্রে জানা যায়, মো. ফরহাদ হোসেন রুবেল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মীরেরকান্দি গ্রামের শুক্কুর আলী ভাণ্ডারির ছেলে। রুবেল নগরীর সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার আসামি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আগ্রাবাদের মিস্ত্রিপাড়া থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
অন্যদিকে গত ৬ জানুয়ারি গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ভেতরে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরের শ্যালক তুষার আহমদ এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় পার করেন। এতে সহযোগিতা করেন ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়সহ বেশকয়েকজন কর্মকর্তা। এ নিয়ে কারাগারের মধ্যে তোলপাড় শুরু হলে কারা অধিদফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে গত ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে ওই ঘটনায় সহায়তার দায়ে ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানসহ পাঁচজনকে প্রত্যাহার করে কারা সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায়ও কারা প্রশাসনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম