Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২১ ২১:৪৬ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২১ ২২:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইসলামী ব্যাংকের পর ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম’ও জামায়াতের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে জামায়াত ইসলামী দেশের ধনাঢ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত ছিল, তার মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত।

জামায়াতের নেতাদের নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের মেয়াদ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যাতে স্থান পেয়েছেন সরকার সমর্থকরাই। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সিংহভাগ অর্থায়নে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরায় নিজস্ব ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও দুটি ক্যাম্পাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হতো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ক্যাম্পাস বন্ধ করে এখন শুধুমাত্র সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ৪৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এ ক্যাম্পাসে আছে ৪৬টি ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১১টি বিভাগে আছে। এগুলো হচ্ছে- কোরআনিক সায়েন্স অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফার্মেসি, ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থনীতি ও ব্যাংকিং, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ও আইন বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ বিদেশি শিক্ষার্থী। পূর্ণকালীন ৩৫০ জন শিক্ষকসহ পাঁচশ’রও বেশি শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে ১০১ জন শিক্ষক হলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার।

তবে অভিযোগ আছে, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা ও সংঘটনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। শুরু থেকেই গোলাম আজমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন, যাদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন।

২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াত ঘরানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জনের যে জোরালো দাবি উঠেছিল, তাতে এই আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও ছিল।

গত ২৬ বছর ধরে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার। তবে ট্রাস্টি বোর্ডে ঘুরে-ফিরে জামায়াত ঘরানার লোকজনই থাকেন। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ ও মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং তার অনুসারীদের।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও বিদেশ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পরে তাকে বিদেশ বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নদভীর অনুসারীদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী সাংসদকে বিদেশ বিভাগের পদ থেকে সরিয়ে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কৌশলে বের করে দিয়েছেন জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংগঠন থেকে তহবিল এসেছে মূলত নদভীর হাত ধরেই। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নদভীর প্রভাব ছিল বেশি।

এ অবস্থায় গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ দুই বছরের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের দুই বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর গত ১ মার্চ শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয় যাতে সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ নদভীকে। ২১ জন গঠিত ট্রাস্টিবোর্ডের অধিকাংশই সরকারি ঘরানার হিসেবে পরিচিত। ট্রাস্টি বোর্ডে রাখা হয়েছে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের ছেলে সালাহউদ্দিন মোহাম্মদ নদভীকেও।

নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার (৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তবে সেই সভা ঠেকাতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালায় জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলামের অনুসারীরা। আকস্মিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে ছুটি ঘোষণা করা হয়। মূল ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ দেওয়ার পরও ছিলেন না উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার এবং ফিন্যান্স ডিরেক্টর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে সভায় অংশ নেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিয়ম ভঙ্গ করায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া রেজিস্ট্রার এবং ফিন্যান্স ডিরেক্টরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী সভায় সেটি চূড়ান্ত হবে।

আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘আমরা প্রথম সভা করেছি। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ভাইস চ্যান্সেলরকে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং বলেছিলেন যে আপনি থাকবেন। কিন্তু তিনি থাকেননি। বরং গেইটসহ সব কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। আমরা খুব ছোট্ট একটা কক্ষে সভা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রশাসক থাকেন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার। তারা তিনজন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত। তারা যেহেতু অনুপস্থিত থেকে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।’

‘আরেকজন হচ্ছেন রেজিস্ট্রার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন না, তাকেও শোকজের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরেকজন ফিন্যান্স ডিরেক্টর। তাকেও আমরা শোকজ করব। কারণ তিনিও ছিলেন না। উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেটা আগামী সভায় সিদ্ধান্ত হবে’- বলেন আনোয়ারুল আজিম আরিফ।

নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাদের অবদান আছে, তাদের সুকৌশলে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জামায়াত ইসলামী কুক্ষিগত করে রেখেছিল। রাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় সরকার নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মধ্য দিয়ে সেটিকে রক্ষার চেষ্টা করছে।

সাংসদ নদভী বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ড করেন, আবার উনাদের মর্জিমাফিক উনারা সেটা পরিবর্তন করেন। এই পরিবর্তনের কথা আমরা যারা আগেও ট্রাস্টিবোর্ডে ছিলাম আমরা জানতাম না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানে না, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিও জানে না, ইউজিসিও জানে না। ওরা একসময় জামাতের আমিরকে নিয়ে আসে, একসময় নায়েবে আমিরকে নিয়ে আসে। সর্বশেষ উনাদের যে ট্রাস্টি বোর্ড ছিল, সেখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন সভাপতি, যিনি একসময় ভারপ্রাপ্ত আমিরও ছিলেন। তিনি জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতিও। কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির, চট্টগ্রাম মহানগরের আমির, উত্তর জেলার আমির, দক্ষিণ জেলার আমির- উনারাই ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডে।’

‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিচালনা পরিষদ হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ড। একটা রাজনৈতিক দলের আমির-নায়েবে আমির দিয়ে তো এভাবে বোর্ড গঠন হতে পারে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন, এটা হতে পারে না। সেই কারণেই দেখা যাচ্ছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান সরকারের আমলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি একবারও আসেননি কনভোকেশনে। ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা সাহেব এসেছিলেন। তখন গোলাম আজম সাহেবও এসেছিলেন। জামায়াতের সিনিয়র নেতারাও এসেছিলেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও উনারা এনেছিলেন।’

আকস্মিকভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ নদভী বলেন, ‘আমরা উপলব্ধি করেছি, যারা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মূলত অবদান রেখেছেন, তাদের উত্তরসূরীদের নিয়ে আসা দরকার। এই প্রস্তাব নিয়ে আমি তথ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করি। এরপর উনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন যে, আগের ট্রাস্টি বোর্ড বিলুপ্ত করে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হোক। এরপর তালিকা প্রণয়ন হয়েছে। তালিকা যেটা হয়েছে, সেটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদন করেছে।’

নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গোলাম আজম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের মতো স্বাধীনতাবিরোধীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরা কোনো আইন মানে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাদের অবদান ছিল তাদের অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দিবস পালন করে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে তারা কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জামায়াত-শিবিরের আখড়া বানিয়েছিল। এখান থেকেই জামায়াত-শিবির জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। সরকার চায়, বিশ্ববিদ্যালয়টা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাস্টি বোর্ডের অপর এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াত-শিবির এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দুই যুগ ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছে। এখানে জামায়াত-শিবিরের ট্রেনিং সেন্টার ছিল। সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়া হত। এমপি নদভী সাহেবকে সামনে রেখে এই প্রতিষ্ঠানটিকে জামায়াত-জঙ্গিমুক্ত করার একটা চেষ্টা চলছে। কারণ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার একটা প্রক্রিয়া আর কি। সরকার চায়, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক, লেখাপড়া হোক।’

দুই যুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের জামায়াত ঘরানার কোনো সদস্য নাম প্রকাশ করে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গত ডিসেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এরপরও এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড বিলুপ্ত করা যায় না কিংবা নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা যায় না।’

জামায়াত নেতাদের নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয়ে ওই শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। সাবেক মন্ত্রী বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান সাহেবের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। সেখানে কি উনাদের লোকজন ছাড়া পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়? তাহলে যে প্রতিষ্ঠানটা জামায়াতের, সেটার ট্রাস্টি বোর্ড ওই দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত হলে কথা আসবে কেন? আসলে সমস্যাটা হয়েছে ইগোর। আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং নদভী সাহেব- একজন সাতকানিয়ার সাবেক সাংসদ, আরেকজন বর্তমান সাংসদ। দুজনের ইগো সমস্যার কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’

এ অবস্থায় তাদের করণীয় সম্পর্কে ওই শিক্ষক বলেন, ‘অলরেডি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আ ন ম শামসুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াত নিয়ন্ত্রণমুক্ত নেজামউদ্দিন নদভী শাহ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর