Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিতুমীর কলেজের ‘বিতর্ক ক্লাব’ নিয়ে নানা বিতর্ক

তিতুমীর কলেজ করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২১ ২০:৩৮ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২১ ১৯:১৫

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের সহ-শিক্ষামূলক সংগঠন বিতর্ক ক্লাব নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সংগঠন ঘিরে রয়েছে আর্থিক অস্বচ্ছতাসহ নানা অভিযোগ। এছাড়া চার বছর আগে কলেজ থেকে অনুমতি পাওয়া সহ-শিক্ষামূলক সংগঠনটি প্রথম অনুমোদিত সংগঠন বলে দাবি করায় অন্যন্য সংগঠনের মধ্যেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সূত্র জানায়, আজ প্রতিষ্ঠার চার বছর পূর্ণ করে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সফলতার সঙ্গে বেশ কিছু ইস্যুতে বিতর্কিত হয়ে আসছে সংগঠনটি। খোদ সভাপতির একক আধিপত্যের অভিযোগ জানান বিতর্ক ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

সিনিয়র সদস্যরা আরও জানান, প্রভাব খাটিয়ে কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেননি সংগঠনটির সভাপতি মো. মাহবুব হাসান রিপন। সভাপতির পদ টিকিয়ে রাখতে নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরিতে কালক্ষেপণ করছেন তিনি। এছাড়াও আর্থিক অস্বচ্ছতা ও মনগড়া সিদ্ধান্তের ওপর ক্লাব পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন বেশ কয়েকজন সদস্য আর্থিক অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূতভাবে সভাপতির ইচ্ছেমতো সংগঠন পরিচালনার অভিযোগে ক্লাবটি ছেড়ে গেছেন। যার মধ্যে সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারণ সদস্যরাও রয়েছেন।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাবেদ ইকবালও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এতে তিনি সংগঠনের সভাপতি মাহবুব হাসান রিপনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বেশ কিছু অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অভিযোগ হলো- কর্মশালা হতে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ শতাংশ নিয়মবহির্ভূতভাবে সভাপতির নিয়ে নেওয়া। এছাড়া সভাপতির প্ররোচনায় জুনিয়র সদস্য দ্বারা হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন জাবেদ ইকবাল।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হাসনাইন, সিনিয়র সদস্য ইশতিয়াক খান অয়ন, মেহজাবীন, মো. রাশিদ, সাইফুল ইসলাম রাজসহ অনেক সদস্য সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য নিশ্চিত করেছেন। সংগঠনটির ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. হাসনাইন।

হাসনাইন লিখেছেন, ‘ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর পাঁচ বছর কেটে গেলেও আমাদের আরও বড় সফলতা থাকতে পারতো। সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা, সংবিধান ছাড়া সংগঠন চালিয়ে নেওয়া, সংগঠনকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া- সংগঠনটিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুব বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লাবের সাবেক একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘মাহবুব ক্লাবকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত নিজের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে। ক্লাবের সদস্যদের এনডিএফ বিডিতে কাজ করানোর লোভ দেখিয়ে নানাভাবে পরিশ্রম করাচ্ছে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাদের মতো প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের ক্লাব থেকে সরিয়ে দিয়েছে।’

এছাড়া ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে ক্লাবের মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে বেশ কিছু সদস্যকে রিমুভ করারও অভিযোগ করেন তিনি।

সভাপতির বিরুদ্ধে করোনাকালে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্যের দাবি, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম থেকে পাওয়া অর্থের আয়-ব্যয়ের সুষ্ঠু হিসাব দিতে পারেননি মাহবুব হাসান রিপন। সংগ্রহকৃত অর্থের একটি অংশ শিক্ষা ঋণের নামে কাছের লোকজনকে দেন তিনি।

তিনি আরও দাবি করেন, সভাপতি মাহবুব হাসান রিপনের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন রয়েছে- এমন একজন কার্যনির্বাহী সদস্যকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে দিয়েছেন তিনি।

তবে এসব অভিযোগের অধিকাংশই অস্বীকার করেন সভাপতি মাহবুব হাসান রিপন। জাবেদ ইকবালের পদত্যাগপত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সিনিয়র সহ-সভাপতি অব্যাহতি পত্র জমা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা বরাবর, সভাপতি বরাবর দেননি। তাই ওনার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করা হয়নি।’

যদিও মাহবুব হাসান রিপন নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে দাবি করে থাকেন। কর্মশালা হতে প্রাপ্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অনেককে বিতর্ক শিখিয়ে আসছি। এমনকি বিভিন্ন সংগঠনে যারা আছে তাদেরকেও আমি বিতর্ক শিখিয়েছি, কাজেই বিতর্ক শিখিয়ে টাকা নেওয়া এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ তবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এদিকে তিতুমীর কলেজের বিতর্ক ক্লাব কলেজটিতে প্রথম অনুমোদিত সহ-শিক্ষা মূলক সংগঠন দাবি করে একটি লেখা মাহাবুব হাসান ফেসবুকে পোস্ট করায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘সরকারি তিতুমীর কলেজ-এ ৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত সহ-শিক্ষামূলক সংগঠনের নাম- সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব (জিটিসি ডিসি)।’

তবে তিতুমীর কলেজের শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের দাবি, তাদের সংগঠন ডিবেট ক্লাবের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে তিতুমীর কলেজের শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিক হোসাইন বলেন, কলেজের ডিবেট ক্লাবের আগে আমাদের ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা খুব শীঘ্রই আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্লাবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিব। সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় ৫২ বছর আগে। এতো দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কত সংগঠন হয়েছে আর ভেঙেছে তার হিসেবের সুনির্দিষ্ট তালিকা ছাড়া বর্তমানে চলমান কোনো সংগঠন কখনোই বলতে পারবে না তারাই প্রথম।

তিনি আরও বলেন, কোনো সংগঠনের প্রতিষ্ঠা কত সালে এসব নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে, আমাদের সকলের উচিত সব সংগঠনগুলোর প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল থাকা। নিজ নিজ যায়গা থেকে শুভ কামনা জানানো। কেননা দিন শেষে আমরা সবাই একই কলেজের শিক্ষার্থী।

তিতুমীর কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ। যিনি এখন কাজ করছেন রেডিও স্বাধীনে। তিনি তিতুমীরে পড়ার সময় বিতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিতর্ক করেছি নিজেদের মান উন্নয়নের জন্য। ৬৮ সালে যখন জিন্নাহ কলেজ (বর্তমান তিতুমীর কলেজ) প্রতিষ্ঠা হয়, তখনও কলেজে বিতর্ক ছিল। তাদের জানিয়ে দিও।’

সারাবাংলা/এনএসএম/এনএস

বিতর্ক ক্লাব সরকারি তিতুমীর কলেজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর