Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লোপাট, গ্রেফতার ৫

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ মার্চ ২০২১ ১৭:১১ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২১ ১৮:৪৭

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্স ও ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিন) সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক কিংবা ক্রেতা সেজে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে প্রতারণায় জড়িত একটি চক্রকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (২ মার্চ) খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ জালিয়াতি চক্রের এই পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার পাঁচ জন হলেন— আল আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুৎ, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করত নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মচারী-কর্মকর্তা। জালিয়াতিতে জড়িত ৪৪ জনকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।

এর আগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে একজনকে গ্রেফতার করে জালিয়াত চক্রের সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ। এরপর তদন্তে নেমে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, প্রতারক চক্রটি ভুয়া এনআইডি, ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডসহ অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানিয়েছেন, ভুয়া এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিম্নপদস্থ কিছু অসাধু কর্মচারী। গত ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতা আল আমিনকে গ্রেফতার করে। আল আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণায় জড়িত বেশ কয়েকজনের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে বিদ্যুতকে গ্রেফতার করা হয়। বিদ্যুৎ ও আল আমিন তাদের অন্যান্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী কখনো ক্রেতা, কখনো বিক্রেতা, কখনো জমির মালিক, কখনো ফ্ল্যাটের মালিক সাজেন। আব্দুল্লাহ আল শহিদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করে। রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে।

যেভাবে প্রতারকরা ব্যাংকের চোখে ফাঁকি দেয়

ডিবি জানিয়েছে, প্রথমে প্রতারকরা ব্যাংকে গিয়ে বলেন, তারা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নেবেন। ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট ভিজিটের কথা জানানো হলে প্রতারক চক্র তাদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানেও জমির মালিক ও ভবনের মালিক হিসেবে তাদের চক্রের লোকজনই থাকে। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক দেখতে পান।

পরে প্রতারক চক্রটি ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে থেকে এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে আসেন। সরল বিশ্বাসে ফ্ল্যাট মালিক এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্র দিয়ে দেন। তারপর প্রতারকরা ফ্ল্যাট মালিকের এনআইডি হুবহু নকল করে কেবল ছবি পরিবর্তন করে এনআইডি তৈরি করে। ছবি পরিবর্তন করা এনআইডিও নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে সার্ভার ও ওয়েবসাইটে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এর মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভিজিট করার আগেই দুয়েকমাসের জন্য অফিস ভাড়া নেন প্রতারকরা। ব্যাংক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক দেখতে পান। পরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হয়। এরপর এনআইডি পরিবর্তন করা সাজানো ক্রেতার নামে ব্যাংক ঋণও দিয়ে দেয়। পরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক খোঁজখবর করে জানতে পারে, প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চক্রটি কৌশলে কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে থেকে ফ্ল্যাট কিনবে বলে তার এনআইডি ও অন্যান্য কাগজ নিয়ে নেয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এনআইডির সব তথ্য ঠিক রেখে কেবল ছবি পরিবর্তন করে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করে। ব্যাংক এনআইডি সার্ভারে যাচাই করতে গিয়ে তখন সব তথ্য সঠিক পায়। সার্ভারের এসব তথ্য দেখে আশ্বস্ত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ অনুমোদন করে।

এসব প্রতারণায় ব্যাংকের কেউ জড়িত কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ৪৪ কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে ডিবি পুলিশকে জানানো হয়েছে। গ্রেফতাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ও পল্টন থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

এনআইডি জালিয়াতি এনআইডি জালিয়াতির মামলা গোয়েন্দা পুলিশ জালিয়াতি চক্র টপ নিউজ ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ