Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রহ্মপুত্রপাড়ে অন্যরকম বই উৎসব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ মার্চ ২০২১ ১৯:১২

ঢাকা: ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ছোট্ট গ্রাম শাঁখচূড়া। ব্রহ্মপুত্রপাড়ের ওই গ্রামে পঁচিশ বছর আগে পারিবারিক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওই ফাউন্ডেশন চালু করেছে একটি গণপাঠাগার। আর এবার প্রতিষ্ঠানটির রজতজয়ন্তী উদযাপনে জন্য পাঠাগারের সদস্যরা আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী বইমেলার।

আগামী ৫ মার্চ স্থানীয় শাঁখচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। আর এই মেলায় সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ছাড়ে বই পাওয়া যাবে। গ্রাম বাংলায় বই পড়াকে ছড়িয়ে দিতেই ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এলাকার একদল তরুণ বইপ্রেমীর উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলায় প্রতীকী মূল্যে গ্রামের শিক্ষার্থী আর উৎসাহী পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেয়া হবে মননশীল ঝকঝকে বই। ” ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার/পড়ব বই, বাড়ি হবে পাঠাগার’- এই স্লোগানে তারা বইমেলার জন্য সংগ্রহ করেছেন প্রায় ছয় হাজার বই। এই সংগ্রহে আছে বঙ্গবন্ধুর লেখা সব বই, মুক্তিযুদ্ধের বই, চিরায়ত বই, শিশু-কিশোরদের বই, ধর্মীয় বই। একই সঙ্গে দেশসেরা লেখকদের বইও রয়েছে।

ব্যাংকার সাদেকুর রহমান চাকরি করেন ঢাকায়। মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তিনি। প্রতিষ্ঠানের রজতজয়ন্তী উদযাপনের আহবায়কও তিনি। সাদেকুর রহমান জানান, ‘দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন প্রকাশককে এই মেলার কথা জানালে তারা রাজি হন সর্বোচ্চ হ্রাসকৃত মূল্যে বই দিতে। বিনামূল্যে বই দিতেও এগিয়ে এলেন কয়েকজন প্রকাশক। আবার কেউবা বই কিনে দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন বই কেনার টাকা।’

আয়োজকরা জানান, এভাবে যে পরিমাণ বই যোগাড় হয়েছে তার মোড়ক মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা! গ্রামের বইপড়ুয়া বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে এই বই পৌঁছে দেওয়া হবে মাত্র লাখ খানেক টাকার বিনিময়ে। একশ টাকা মূল্যের বই দেওয়া হবে ২০ বা ২৫ টাকায় কিংবা তারও কমে। এ জন্য বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে আয়োজকদের।

বিজ্ঞাপন

সাদেক জানালেন, আমাদের পাঠাগারের সদস্যরা দারুন উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে। কারণ আমরা চাই, পাঠ্য পুস্তকের বাইরে মননশীল বই পড়াকে অভ্যাসের অনুষঙ্গ করে তুলতে, চাই বইয়ের আলোকিত আনন্দভূবনের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে।

শিক্ষাবিদ এ বি মুসলেহ উদ্দিন আহমেদের উত্তরসূরীরা এ আয়োজনের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখছেন। তাদেরই একজন ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব তিনি । নিজেও একজন লেখক। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে তৈরি হয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন। পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের গন্ডি ছাড়িয়ে এটি এখন এলাকার আলোকিত সকল মানুষের। তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকলেও অনেকে হাতের কাছে পছন্দের বই পান না, অনেকেই বিভিন্ন ব্যস্ততায় বই পড়তে পারেন না। কিন্তু বইপ্রেমকে পছন্দ করেন না- এমন মানুষ বোধহয় দুর্লভ। সবার উৎসাহ আর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা দেখে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে নিজের আরেক দায়িত্ব বলেই মনে করেছি।

তিনি মনে করেন, গ্রামগুলোতে এভাবে বই পড়ার অভ্যাস আর পাঠাগার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারলে মুক্তবুদ্ধি বিকশিত হবে, সত্যিকার আলোকিত সমাজ তৈরিতে তা রাখবে অনেক বড় ভূমিকা। তার ভাষায়, ‘বিদ্যুতের আলোয় এখন উদ্ভাসিত আমাদের গ্রামগুলো। এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় বইয়ের অনির্বাণ আলো, তাহলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, ভাষা শহীদদের চেতনায়, মুক্তবুদ্ধির আলোকিত নতুন প্রজন্মই আমাদের নিয়ে যাবে স্বপ্নের সোনার বাংলায়।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

বইমেলা ময়মনসিংহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর