আমি শিক্ষক রাজনীতির চরম নোংরামির শিকার: সামিয়া রহমান
১ মার্চ ২০২১ ১৪:৪০ | আপডেট: ১ মার্চ ২০২১ ১৬:১৩
ঢাকা: গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান। প্রতিহিংসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হয়েছেন বলেও এ সময় দাবি করেন।
সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন সামিয়া রহমান। তার পরিবারের পক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমানের সম্প্রতি পদাবনতি ঘটে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আর আলোচিত সেই গবেষণা প্রবন্ধে তার সহকর্মী অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি শুরু থেকে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন। দীর্ঘ ৪ বছর তারা তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। প্রতিটি মিটিংয়ের পর তদন্ত কমিটির দু তিনজন সদস্য সাংবাদিকদের ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তদন্ত শেষ হবার আগেই। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই আমার বিরুদ্ধে রায় তারা তৈরি করে রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘ট্রাইবুন্যাল পর্যন্ত বলেছে ন্যায়বিচার হয়নি। আমার বেলায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা এ ধরনের সুপারিশ করেনি বা রায় দেয়নি। ট্রাইবুন্যালের আহ্বায়ক ড. রহমত উল্লাহ, সদস্য জিনাত হুদা নিজে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন একদমই ন্যায়বিচার হয়নি। বিশ্বিবিদ্যালয়ের অনাচারগুলো নিয়ে ড. রহমতউল্লাহই চ্যালেঞ্জ করতে বলেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এটা প্লেজারিজম নয়। অথচ ভাইস চ্যান্সেলর গণমাধ্যমকে বলে দিলেন ট্রাইবুন্যালের সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাইবুন্যাল তো এই সুপারিশ করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপনারা ট্রাইব্যুনালের রিপোর্ট চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই জার্নালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিসটেন্ট অ্যালেক্স মার্টিন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ২৭-০৯-১০১৭ সালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শিকাগো জার্নালের যে চিঠির ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মিডিয়া ট্রায়াল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শাস্তির সুপারিশ করেছে, ডিমোশন দিয়েছে – সেই চিঠিটিই আদতে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। শিকাগো জার্নাল থেকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এই ধরনের কোনো চিঠি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। অ্যালেক্স মার্টিন নামে শিকাগো জার্নালে কেউ কখনো কাজ করেনি। এমনকি শিকাগো ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো প্রেসেও অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ নেই। শিকাগো জার্নালের এডিটর ক্রেইগ ওয়াকার নিজে জানিয়েছেন অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ কখনো শিকাগো জার্নালে ছিলেন না।’
সামিয়া রহমান বলেন, ‘গত ৪ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের চাপে ও তদন্তাধীন বিষয় বলে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা দিনের পর দিন প্রপাগান্ডা চালিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। অবশ্যই বাংলাদেশের আদালতের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে আদালতেই যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আমি কোনো লেখা লিখিনি, জমা দেইনি, ডিন অফিসে আমার কাছ থেকে লেখার কোনো হার্ড বা সফট কপি জমা দেওয়ার কোনো প্রমাণ তদন্ত কমিটি এবং ট্রাইব্যুনাল পায়নি। রিভিউয়ারের কপিও আমার কাছে আসেনি। মারজান তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করেছে যে, সে জমা দিয়েছে, রিভিউয়ারের কপিও সেই নিয়েছিল এবং এটি তার অনভিজ্ঞতাবশত ও অনিচ্ছাকৃত ভুল, অথচ তদন্ত কমিটি বলছে দালিলিক প্রমাণ নাকি অষ্পষ্ট কে জমা দিয়েছে। মারজান নিজে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া ও রিভিউ করার কথা লিখিতভাবে বলার পরও কেন দালিলিক প্রমাণ অস্পষ্ট বলে তদন্ত কমিটি? এ সংক্রান্ত প্রমাণস্বরূপ মারজানকে দেওয়া আমার মেইল পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কমিটি সেক্ষেত্রেও নিশ্চুপ থেকেছে।’
সামিয়া রহমান বলেন, ‘এই বিতর্কিত নিবন্ধটি আমার লেখা নয় , নিবন্ধটি প্রকাশনার জন্য আমি জমা দেইনি, রিভিউয়ারের রিপোর্ট সম্পাদনা পরিষদ থেকে আমার কাছে কখনই পাঠানো হয়নি এবং কোনো অ্যাকসেপটেন্স লেটারও আমার কাছে পাঠানো হয়নি। বিতর্কিত নিবন্ধটি যেহেতু আমি জমা দেইনি, সেহেতু জমা দেওয়া থেকে ছাপানো পর্যন্ত আমার কোনো দালিলিক সম্পৃক্ততা তদন্ত কমিটি এবং ট্রাইব্যুনালও খুঁজে পায়নি। আমি মারজানকে একটি আইডিয়া পাঠিয়েছিলাম মাত্র। প্রতিহিংসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি।’
প্রকৃতি সত্য উদঘাটনে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে সামিয়া রহমান বলেন, ‘এখন চ্যান্সেলর হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অভিভাবক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছেই আমার আবেদন যেন তিনি প্রকৃত সত্য উৎঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন এবং আমার বিশ্বাস তিনি নির্দেশ দিলে সত্যি ঘটনা, ষড়যন্ত্র সব প্রকাশিত হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের আদালতের প্রতি আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মিলু এইচ রহমান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএসএ