Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার, ‘মাসোহারা নেন’ খাদ্য পরিদর্শক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:১৮ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:১৭

নারায়ণগঞ্জ: জেলার রূপগঞ্জে সর্বত্রই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার অধিকাংশ হোটেলে নোংরা পরিবেশে খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হচ্ছে। হোটেলগুলোতে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। এসব হোটেলের কোনো লাইসেন্স বা সরকারি অনুমোদনও নেই। এমনকি হোটেলগুলো থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে।

এদিকে, উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ও পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশেও অবাধে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে উপজেলার লাখো মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা রূপগঞ্জ উপজেলার ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ হলেও ভাড়াটিয়া-বহিরাগতসহ এখানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তারাব ও কাঞ্চন নামে দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রূপগঞ্জ উপজেলা। ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে নানা শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় রূপগঞ্জ ব্যস্ততম এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে।

শিল্প এলাকা বলে এখানে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের বসবাস বেশি। আর উপজেলায় ছোট-বড় ও অস্থায়ী খোলা খাবারের দোকানসহ তিন সহস্রাধিক হোটেল রয়েছে। রূপগঞ্জের নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষদের নোংরা পরিবেশেই এসব হোটেল থেকে খাবার খেতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ভুলতা উড়ালসেতুর নিচে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশসহ লেনে শতাধিক ছোট-বড় রেস্তোরাঁ ও ভাসমান খোলা খাবারের দোকান রয়েছে। এখানে ধুলাবালুর মধ্যেই অবাধে খাবার প্রস্তুত ও বিকিকিনি চলছে। তাছাড়া হোটেল গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কোনো হোটেল কর্মচারী ও খাবার ব্যবসায়ীরা মাস্ক ব্যবহার করছেন না। খোলা জায়গায় আলুর চপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, বার্গার, হালিম, ফুচকা, নুডুলস ও পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একইভাবে, পূর্বাচলের নতুন শহরতলী, তারাব বাজার, বরাব বাজার, রূপসী বাজার, নোয়াপাড়া বাজার, কাঞ্চন বাজার, মুড়াপাড়া বাজার, ভক্তবাড়ি, ইছাপুরা, নগরপাড়া, বেলদি, দাউদপুর, আতলাপুর বাজারসহ ৭টি ইউনিয়নের সর্বত্রই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে।

 

জানা গেছে, এসব হোটেলে রান্নার কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের ভোজ্যতেল ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমধ্যে নিম্নমানের পাম অয়েল, সুপার সয়াবিন, বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার ড্রামের ময়লা থেকে সংগ্রহ করা তেল দিয়ে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন হোটেল ও খোলা দোকান থেকে প্রতিনিয়ত খাবার খেয়ে উপজেলার অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এর মধ্যে অনেকেই গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ বদহজমে ভুগছেন। আর কর্মস্থলে এসে এসব হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও খাবার খাওয়ার উপায় নেই। তাই এসব হোটেলে সুষ্ঠু তদারকি করে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুলতা এলাকার পোশাক শ্রমিক হারেজ মিয়া, সো‌হেল, লোকমান, জ‌নি মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভুলতা উড়ালসেতুর নিচে খোলা হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে হয়। এসব হোটেলে নিম্নমানের তেল দিয়ে রান্না করা হয়। কয়েক বছর ধরেই গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন তারা।

মুড়াপাড়া ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, কাজে আসার পরে খাবার খাই খোলা হোটেলে ও ভাসমান দোকানে। ভালো খাবার খেতে অনেক টাকা লাগে বলে কম দামে রাস্তায় খাই। এখন প্রায়ই পেটে ব্যথা হয়। আর গ্যাস্ট্রিক তো লেগে আছেই।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লে‌ক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, নিম্নমানের তেলে রান্না করা ও অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার খেলে মানুষের গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও বদহজম লেগেই থাকবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হোটেলগুলো থেকে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, জনবল কম থাকায় রূপগঞ্জের হাট-বাজারে সময়োপযোগী তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, দুটি পৌরসভাবাদে সর্বত্রই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী খাবারের হোটেল ও দোকানগুলোর পক্ষে লাইসেন্স করার খরচ জোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য। তাই মানবিক দিক থেকে তাদের বিবেচনা করা হলেও স্বাস্থ্যকর ভাবে রান্না ও পরিবেশন করার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) মাহিন ফরাজি বলেন, খোলা খাবার বিক্রি বন্ধ করতে প্রায়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দ্রুত স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি ও পরিবেশনে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে মতবিনিময় সভা করা হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান বলেন, নিয়‌মিত মোবাইল কোর্ট বসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং রয়েছে। মধ্যবর্তী করোনাকালীন অভিযান শিথিল থাকলেও বর্তমানে মনিটরিং রয়েছে। আর বিশুদ্ধ খাবার আইন অমান্য করলে প্রতিটি এলাকায় বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সারাবাংলা/এনএস

অস্বাস্থ্যকর খাবার উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক টপ নিউজ মাসোহারা রূপগঞ্জ হোটেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর