জাতীয় পার্টি কারও দয়া বা ভিক্ষার রাজনীতি করে না: জি এম কাদের
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৩৮
ঢাকা: জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই, জাতীয় পার্টি কোন জোটেই নেই। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বি-টিম নয়। নির্বাচনের সময় কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, তবে বেশির ভাগ আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়াই করেছেন। জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে মাঠে আছে। নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি প্রতাপের সঙ্গে নয় বছর দেশ পরিচালনা করেছে। দেশ পরিচালনায় সুশাসন ও উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল ঐহিত্য আছে জাতীয় পার্টির। দেশ ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় কখনোই আপস করছে না। জাতীয় পার্টি কারো দয়া বা ভিক্ষার রাজনীতি করে না। কারো করুণা নয়, সম্মানের জন্য রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে আনুষ্ঠানিকভাবেই দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যারাই সরকার গঠন করে তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িত। উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। পেশি শক্তি, কালোটাকা আর প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কলুষিত করছে নির্বাচন ব্যবস্থা। একটি দলের প্রার্থীরাই নির্বাচনে জিতছে তাই রাজনীতির মাঠে অন্য দলগুলোর টিকে থাকাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে রাজনীতি করছে। কোন নির্যাতনে মাথা নত করবেনা জাতীয় পার্টি।’
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বল হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আমাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তার আগে আওয়ামী লীগ দুর্বল থাকলেও এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সুপার পাওয়ার হয়ে গেছে। বিএনপিও অনেক দিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি আরও বেশি সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে দুর্বল হয়েছে। তাই এখনই রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পালিত কিছু বুদ্ধিজীবী জাতীয় পার্টি ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেননি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বৈধভাবেই সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাতে দেশের মানুষ খুশি হয়েছিলেন। কারণ, দেশের মানুষ তখন একটি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছিলেন। ওই সময় শুধু বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণকে সমর্থন করেছিলেন। নয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে উন্নয়ন ও সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আইনের শাসন ও মানুষের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বৈধভাবেই রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তৎকালীন সরকার তিন জোটের রূপরেখার সকল অঙ্গীকার ভঙ্গ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে জেলখানায় বন্দি করা হয়। তখন পল্লীবন্ধুর নামে কোনো অভিযোগ ছিল না। পার্টির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের ওপর। কিন্তু তিন জোটের রূপরেখা অনুয়ায়ী সকল দলগুলো রেডিও টিভিতে বক্তৃতা দিয়েছে কিন্তু জাতীয় পার্টিকে বঞ্চিত করা হয়। মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি, নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারেনি জাতীয় পার্টি। ঠুনকো অভিযোগ তুলে এরশাদকে নির্বাচন করতে দিতে চায়নি। কিন্তু গণমানুষের কঠোর আন্দোলনের মুখে এরশাদকে নির্বাচন করতে দিতে বাধ্য হয়েছিল। জেলখানায় বন্দি এরশাদ ৫টি আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনোই জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হননি, তিনি মৃত্যুর পরেও গণমানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত। তাই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা রাজনীতির মাঠে মাথা উঁচু করে কথা বলবে। কারণ, জাতীয় পার্টি ও পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতির নিয়ামক শক্তি হিসেবে ছিলেন।’
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, ‘দেশে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে, তাই ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। দুর্নীতি, দুঃশাসন আর লুটপাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির সংগ্রাম চলবে। ৯১ সালের পর থেকেই জাতীয় পার্টির ওপরে নির্যাতন চলছে কিন্তু কোনো নির্যাতন জাতীয় পার্টিকে সত্য ও ন্যায়ের আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সংসদে ও রাজপথে জাতীয় পার্টি দেশ ও মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির ইতিহাস সুশাসন ও আইনের শাসনের ইতিহাস। জাতীয় পার্টির রাজনীতি স্পষ্ট, জাতীয় পার্টি গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি করছে।’
এ সময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহিলা পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদের, উপদেষ্টা ও মহিলা পার্টির সদস্য সচিব হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব সংহতির আহ্বায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রাক্তন সৈনিক পার্টির সদস্য সচিব মো. নিজাম উদ্দিন সরকার, জাতীয় তরুন পার্টির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন মৃধা, জাতীয় শ্রমিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্ত, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ-এর সভাপতি মো. ইব্রাহিম খান জুয়েল, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির সভাপতি আজাহার ইসলাম সরকার, জাতীয় তাঁতী পার্টির সদস্য সচিব মো. আক্তার হোসেন, জাতীয় হকার্স পার্টির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন আনু, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পার্টির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, পল্লীবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মো. মুজিবুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. নুরুল আজহার শামীম, সরদার শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব একেএম আশরাফুজ্জামান খান, যুবসংহতির সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, ছাত্রসমাজ-এর সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে