Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আল জাজিরা: রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ৫ অ্যামিকাস কিউরির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:২২ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১২:০৯

ঢাকা: বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে ছয় আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) অভিমত উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ অ্যামিকাস কিউরি রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে তারা মতামত দেন।

ছয়জনের মধ্যে পাচঁজন রিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে একজন রিটের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আগামী বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনে আদেশ দেবেন আদালত।

সোমবার আদালতে অভিমত তুলে ধরেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, কামাল উল আলম, ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী, শাহদীন মালিক ও আবদুল মতিন খসরু।

আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী এ রিট দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, ‘যিনি রিট দায়ের করেছেন তিনি কিভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। যেখানে বিটিআরসির এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন রয়েছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সেখানে আবেদন করতে পারতেন। তা না করে তিনি রিট দায়ের করেছেন। এ ছাড়া আমাদের সংবিধানে ফ্রিডম অব প্রেসের কথা বলা হয়েছে। সে বিবেচনায় আল জাজিরা চ্যানেলটি বন্ধ করা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি।’

আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর মতোই রিটকারির রিট দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী কামাল উল আলম বলেন, ‘রিটটি দায়েরের পূর্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ দিতে পারতেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইনও রয়েছে। তা তিনি করেননি।’

বিজ্ঞাপন

এরপর তিনি ফ্রিডম অব প্রেসের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে জনগনের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমনটি আমার মনে হয়নি।

এর আগের বিভিন্ন অনুসন্ধান রিপোর্ট তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আল জাজিরা একটি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল। এর সীমা বিশ্বব্যাপী কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের তো জুরিকডিকশন রয়েছে। বাংলাদেশ চাইলেই সেই চ্যানেল বন্ধ করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশে এর লিংকটা বন্ধ করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘আল জাজিরায় অভিযোগসহ ঘণ্টাব্যাপী একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করল। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম বললেও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র দেখাতে পারেনি।’

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে রিটকারীর এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। তার কারণ রিটকারী কী কারণে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন তা তিনি রিটে দেখাতে পারেননি।’

আইনজীবী ফিদা এম কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে সেটা বন্ধ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এখন রাষ্ট্র সেটা কেন করেননি সেটা রিট আবেদনকারীকে রাষ্ট্রের এই অ্যাকশন বা ইনঅ্যাকশন জনগণের স্বার্থের বিপরীতে গেছে সেটা প্রমাণ করে দেখাতে হবে।’

আইনজীবী প্রবীর নিয়োগীও মামলার অধিক্ষেত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা এটি একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেল। সেটি আমাদের এখন থেকে বন্ধ করা সম্ভব কিনা। বরং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। সেখানে না গিয়ে তিনি কেন সংক্ষুব্ধ হয়েছে, সে প্রশ্ন উঠে এসেছে।

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন,‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিটিআরসি পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু এটা করলে ফ্রিডম অব প্রেসের ইমেজ নষ্ট হয়। তাই আজ জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করা উচিত নয়।’

বিজ্ঞাপন

এ রিটের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আব্দুল মতিন খসরু ভিন্ন অভিমত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে রিটকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। কেননা সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার আছে। সে কারণে এই রিট দায়েরের যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি। কেননা সংবিধান তাকে সে অধিকার দিয়েছে।’

বাংলাদেশে আল জাজিরা সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রিট দায়ের করেন আইনজীবী এনামুল কবির ইমন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত অভিমত প্রদানের জন্য ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি তাদের অভিমত তুলে ধরেন।

আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রেজা ই রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটনি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

গত ১ ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। তারপরই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর আইনজীবী এনামুল কবির ইমন সংক্ষুব্ধ হয়ে রিট দায়ের করেন।

রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসির) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

অ্যামিকাস কিউরি আল-জাজিরা টপ নিউজ হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর