সংকটাপন্ন কোভিড রোগীদের মৃত্যু কমিয়েছে আর্থ্রাইটিসের ওষুধ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:১৪ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:১৬
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের মাধ্যমে দারুণ ফল পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন, ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের ফলে তাদের মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা সংকটাপন্ন কোভিড রোগীদের সাধারণভাবে স্টেরয়েড দেওয়া হয়ে থাকে। গবেষণার তথ্য বলছে, এর পাশাপাশি প্রতি ২৫ জনের ওপর ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের ফলে একজন করে বেশি রোগীর মৃত্যু কমেছে। যে কারণে এখন যুক্তরাজ্যের অনেক হাসপাতালেই এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থার চিকিৎসকরা বলছেন, ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের ফলে কোভিড রোগীদের সেরে উঠতে সময়ও কম লাগছে। একইসঙ্গে এই ওষুধ দিলে রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রবণতাও কমানো সম্ভব হচ্ছে।
‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬২ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক ওয়েন্ডি কোলম্যান। গত বছর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় চেস্টারফিল্ড রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তিনি বলেন, আমার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমাকে আইসিইউয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও চলছিল। এসময় ‘টসিলিজুমাব’ দেওয়ার পর আমার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয় এবং এরপর আর পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। এর আগ পর্যন্ত আমি শঙ্কায় ছিলাম যে বেঁচে থাকতে পারব কি না।
গবেষকরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোভিড রোগীদের প্রায় অর্ধেকই আর্থ্রাইটিসের এই ওষুধের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। এক গবেষণার অংশ হিসেবে চার হাজার রোগীর ওপর এই ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছিল। তাতে ‘অসাধারণ’ ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষণায় চার হাজার রোগীর অর্ধেককে স্বল্পমূল্যের স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসনের পাশাপাশি ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। বাকি অর্ধেক রোগীকে এই ‘টসিলিজুমাব’ দেওয়া হয়নি। ২৮ দিন পর দেখা গেছে, যাদের ‘টসিলিজুমাব’ দেওয়া হয়নি, তাদের মধ্যে ৬৯৪ জন (৩৩ শতাংশ) মারা গেছেন। অন্যদিকে ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগ করা গ্রুপের মধ্যে মারা গেছেন ৫৯৬ জন (২৯ শতাংশ)। সে হিসাবে ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের ফলে মৃত্যু কমেছে আট জনের বা ৪ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলছে, ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগের ফলে কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার প্রবণতা কমানোর হারও ৩৩ শতাংশ থেকে ৩৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গষেকরা বলছেন, ‘টসিলিজুমাব’ ও ডেক্সামেথাসোন একযোগে ব্যবহার করলে অক্সিজেন পাওয়া কোভিড রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ ও ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে ফেলতে পারে।
এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের যুগ্মপ্রধান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্টিন ল্যানড্রে বলেন, ‘টসিলিজুমাব’ ও ডেক্সামেথাসন একযোগে প্রয়োগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পাওয়া গেছে। এটি কেবল কোভিড রোগী নয়, যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বেই স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্যও সুখবর।
ক্যামব্রিজের অ্যাডেনব্রুক’স হাসপাতালের আইসিইউ চিকিৎসক ড. শার্লোট সামারস বলেন, এই গবেষণাটি একটি অসাধারণ অগ্রগতি। এই ওষুধটি রোগীদের আইসিইউয়ের বাইরে রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ এসব রোগীদের আমার সংস্পর্শে আসতেই হবে না। এটি অত্যন্ত ভালো একটি খবর।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর অধ্যাপক স্টিফেন পোউইস বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি আরও একটি মাইলফলক।
‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগে এমন সুফল মিললেও এই ওষুধটি সস্তা নয়। একেকজন রোগীর পেছনে এই ওষুধের জন্য খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৫০০ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার টাকা)। গবেষকরা বলছেন, তারপরও এই ওষুধটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হতে পারে। কেননা, কোনো রোগীকে মানসম্মত একটি হাসপাতালে আইসিইউতে থাকতে হলে তার জন্য প্রতিদিন খরচ করতে হয় প্রায় দুই হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা)। ফলে ‘টসিলিজুমাব’ প্রয়োগ করার পর যদি রোগীদের আইসিইউতে নিতে না হয়, সেটি তার জন্য আর্থিকভাবেও লাভজনক।
গবেষকরা বলছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার এসব কথা বললেও এখনো গবেষণাটির ফল প্রকাশ পায়নি। শিগগিরই পিয়ার-রিভিউড জার্নালে এই ফল প্রকাশ পাবে।
সারাবাংলা/টিআর
আর্থ্রাইটিসের ওষুধ কোভিড রোগী টপ নিউজ টসিলিজুমাব ডেক্সামেথাসন সংকটাপন্ন রোগী