জাতীয় পতাকার বিকৃতি: ক্ষমা চাইলেন বেরোবির ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৫৯
ঢাকা: মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা বিকৃতি ও অবমাননার ঘটনায় দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিকৃতিকারী ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে পতাকা সরবরাহকারী ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক প্রফেসর ড. নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা জাতীয় পতাকা বিকৃতি করে ছবি তোলেন। পরবর্তীতে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের ৭৫তম বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ঘটনার জন্য ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে চিঠি সতর্ক করে ভিসির মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে তারা ভিসির মাধ্যমে ক্ষমা চান।
পতাকা বিকৃতিকারী ও ক্ষমা চাওয়া ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ও অর্থ-হিসাব দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন, বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, ছাত্র উপদেষ্টা ড. নুর আলম সিদ্দিক, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহজামান, ড. মো. রশীদুল ইসলাম, চালর্স ডারউইন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. কামরুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর জনাব ছদরুল ইসলাম সরকার, সহকারী প্রক্টর প্রদীপ কুমার সরকার, সহকারী প্রক্টর মাসুদ-উল-হাসান।
এ ছাড়াও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, শহীদ মুখতার ইলাহী হলের সহকারী প্রভোস্ট মো. শামীম হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্ট সোহাগ আলী, মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ্ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার শুভঙ্কর চন্দ্র সরকার।
উল্লেখ্য, গত বছরে মহান বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্তরে জাতীয় পতাকায় সবুজের ভিতরে লাল বৃত্তের পরিবর্তে চতুর্কোণা করে বিকৃত করা হয়। এছাড়াও পায়ের নিচে পতাকা লাগিয়ে মাটির সাথে পদদলিত করে ছবি তুলে। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। শাস্তির দাবি উঠে বিভিন্ন মহলে।
পর দিন সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান।
এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর পতাকার অবমাননার অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধানকে প্রধান আসামি করে ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ।
এদিকে ২৮ ডিসেম্বর তাজহাট আমলি আদালতে ১০ শিক্ষক ও ৩ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ মামলা করেন রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিশ্চুপতার কারণে ১৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভিসির কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
বর্তমানে পতাকা অবমামনার একটি মামলায় ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা জামিনে রয়েছেন।
সারাবাংলা/একে