সম্মেলনের ১৪ মাস পর চট্টগ্রাম উত্তরে আ.লীগের কমিটি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সম্মেলনের ১৪ মাস পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে উত্তর জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে এম এ সালাম ও শেখ আতাউর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিনকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য পদে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান।
আতাউর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একবছরেরও বেশি সময় আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলাম। করোনার কারণে সেটা অনুমোদন হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অবশেষে আজ (মঙ্গলবার) আমরা অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়েছি। কমিটিতে সভাপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় পদে আছেন ৩৯ জন এবং ৩৬ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন পেয়েছে।’
জানা গেছে, নতুন কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে ১১ জনকে রাখা হয়েছে। এরা হলেন- অধ্যাপক মো. মাইনুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, এহসানুল হায়দার চৌধুরী, আবুল কাশেম চিশতী, স্বপন কুমার তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার হারুণ, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, মো. ফখরুদ্দিন, সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা, মহিউদ্দিন রাশেদ ও মিরসরাইয়ের জসিম উদ্দিন।
তিন জন যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, দেবাশীষ পালিত ও জসিম উদ্দিন শাহ। তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ খদিজাতুল আনোয়ার সনি, মো. মহিউদ্দিন বাবলু ও নজরুল ইসলাম তালুকদার।
২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এম এ সালাম ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম ২৭ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গিয়েছিলেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছিলেন আগের কমিটির সহসভাপতি। সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথম সহসভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বছরখানেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন শেখ আতাউর রহমান ও গিয়াস উদ্দিন। আতাউর উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গিয়াস উদ্দিনও মীরসরাইয়ের বাসিন্দা। ছাত্রলীগের একসময়ের তুখোড় নেতা গিয়াস চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে সংসদ নির্বাচনে মীরসরাই থেকে মনোনয়ন নিয়ে মোশাররফের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন গিয়াস উদ্দিন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগের কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন।
নির্বাচনে সভাপতি পদে এম এ সালাম ২২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছিলেন ১২৯ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান পান ১৯৬ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন পেয়েছিলেন ১৫৪ ভোট।
নতুন কমিটিতে ফজলে করিম ও গিয়াস উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনারা নতুন কমিটির সম্মানিত সদস্য। এটাই ট্রেডিশন। কারণ উনারা আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সুতরাং সালাম ভাইয়ের অধীনে তো ফজলে করিম সাহেবকে সহসভাপতি করা যায় না। আবার গিয়াস সাহেব তো আমার অধীনে যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেন না। নির্বাচন করেছি বলে আমাদের মধ্যে কোনো মতভেদ-দ্বন্দ্ব নেই। আমরা একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
নতুন কমিটিতে ছিটকে পড়েছেন আগের কমিটির কয়েকজন আলোচিত নেতা। আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইউনুছ গনি এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদারকে নতুন কমিটিতে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। আগের কমিটির হাটহাজারীর মঞ্জুরুল আলম ও ফটিকছড়ির আবু তৈয়ব বাদ পড়েছেন।
২০১২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। তখন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও এম এ সালামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য হলে সহ-সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি থাকাবস্থায় নুরুল আলম চৌধুরী মারা যান।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই
এম এ সালাম চট্টগ্রাম উত্তর আ.লীগের কমিটি টপ নিউজ শেখ আতাউর রহমান