Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা, শহরে সেনা টহল, ইন্টারনেট-টেলিফোন বন্ধ

সারাবাংলা ডেস্ক
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৫৯ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৪৯

ঢাকা: মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে ক্ষমতা নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।  সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।

সু চিসহ দলের জ্যেষ্ঠনেতাদের আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সেনা-নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম মিয়াওয়াদ্দি নিউজ’র বরাত দিয়ে মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে, আজ থেকে আগামী এক বছরের জন্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিভাগের কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লায়িং জরুরি অবস্থাকালে মিয়ানমারের সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুবিধার্থে দেশটির রাজধানীসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোতে সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

বিপজ্জনক পথে হাঁটছে মিয়ানমার: বিবিসির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথান হেড তার বিশ্লেষণে বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে তারা একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে যা ১৯৬২ সালের পর বেসামরিক কোনো সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম। এটি সংবিধানেরও লঙ্ঘন। সবশেষ গত শনিবারই সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছিল সামরিক বাহিনী।

সরকার আর সামরিক বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণটিও বেশ পরিষ্কার। আর তা হচ্ছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউএসডিপি পার্টি গত নভেম্বরের নির্বাচনে খুবই খারাপ ফল করেছে। অন্যদিকে এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায়ও আরও ভালো করেছে।

অভ্যুত্থানের সময়টিও বিশ্লেষণ করার মতো। কারণ নির্বাচনের পর চলিত সপ্তাহেই পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। এই অধিবেশনে পরবর্তী সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে মূলত নির্বাচনের ফলকেই অনুমোদন দিতো। তবে অভ্যুত্থানের কারণে সেটিও আর হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তবে সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তারা যে এক বছর দেশ চালাবে তখন তারা কী করার পরিকল্পনা করছে? অভ্যুত্থানের পর পরই একটি জনরোষ তৈরি হবে কারণ কোভিড-১৯ মহামারি উপেক্ষা করে ৭০% ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছে এবং অং সান সু চিকে নির্বাচিত করেছে।

সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট উইন মিয়ন্ত একমাত্র ব্যক্তি যিনি জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন। তাকেও তার সঙ্গে আটক করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে সামরিক পদক্ষেপগুলো বেশ বেপরোয়া মনে হচ্ছে এবং মিয়ানমারকে একটি বিপজ্জনক পথে নিয়ে চলেছে।

রোহিঙ্গা নেতাদের নিন্দা: বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের এক নেতা বলেছেন যে তারা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে অপসারণের নিন্দা জানান।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সম্প্রদায় মিয়ানমারে গণতন্ত্রকে হত্যার এই ঘৃণ্য চেষ্টার নিন্দা জানাই।’

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তারা যাতে এগিয়ে আসে এবং যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।’

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া: সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, ওয়াশিংটন “সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল কিংবা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের বিকল্প যেকোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সব সরকারি কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি বার্মার জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। সামরিক বাহিনীর তাদের পদক্ষেপ থেকে এখনি সরে আসা উচিত।

বিজ্ঞাপন

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী মারিজ পেইনি বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন মেনে চলতে, আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তিতে এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়ে সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যারা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করেছে তারা কখনোই আসলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেয়নি, আর তাই আজকের ঘটনা আসলে এতদিন ধরে চলা অবস্থারই প্রকাশ মাত্র।’

অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের পর মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় বেশ জোরালো ভাবেই নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন।

রাজধানীতে সেনা টহল: মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গনের রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

প্রধান প্রধান শহরগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং কিছু টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে যে তারা কিছু কারিগরি সমস্যার মুখে পড়েছে এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।

ইয়াঙ্গনে বিবিসি বার্মিজের সংবাদদাতা নিয়েন চ্যাং আয়ে জানান, ইয়াঙ্গন অনেকটা স্বাভাবিকই রয়েছে। শহরটির আঞ্চলিক পার্লামেন্ট এবং আঞ্চলিক সরকারি অফিসগুলোর দখল নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বেসামরিক কর্মকর্তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

ইয়াঙ্গনের বাসিন্দারা এরইমধ্যে সতর্কতা নিতে শুরু করেছে। অনেকেই বাইরে বের হয়ে খাবার ও শুকনো খাবার কিনতে শুরু করেছেন।

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ সেনাবাহিনীর: গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩% আসন পায় যাকে মিস সু চির বেসামরিক সরকারের প্রতি সর্বসাধারণের অনুমোদন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বার নির্বাচন ছিল মাত্র।

তবে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং ইলেক্টোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

সম্প্রতি সামরিক বাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলার পর থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি: মিলিটারি টিভি নিশ্চিত করে যে, সকালে অং সান সু চিকে গ্রেফতারের পর দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

সোমবার সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং লাইংয়ের কাছে হস্তান্তর করছে। সূত্র: বিবিবি, রয়টার্স, সিএনএন।

সারাবাংলা/একে

টপ নিউজ মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর