Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রথম দম্পতি হিসেবে ভ্যাকসিন নিলেন ডা. মোস্তফা ও ডা. কানিজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২১ ১০:২৪ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৩৩

ঢাকা: দেশে প্রথম দম্পতি হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ এস এম মোস্তফা জামান ও স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা। ভ্যাকসিন গ্রহণের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে বিএসএমএমইউ’র টিকাদান কেন্দ্রে এই চিকিৎসক দম্পতি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন গ্রহণ শুরু হয়। প্রথমদিন শুধু রাজধানীর একটি হাসপাতালে ২৬ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন পাঁচটি হাসপাতালে মোট ৫৪১ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, তারা দুজনই সুস্থ আছেন।

অধ্যাপক ডা. এ এস এম মোস্তফা জামান সারাবাংলাকে বলেন, দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় তখন কিন্তু আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে গেছি। অনেক জায়গায় কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলেও আমাদের কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষাতেই ছিলাম। শুধুমাত্র আমরাই না বরং পুরো বিশ্বই ভ্যাকসিনের অপেক্ষা করছিল। তাই বাংলাদেশে যখন ভ্যাকসিন আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয় তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নেই প্রথম দিকেই ভ্যাকসিন নেব। কারণ চিকিৎসক হিসেবে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের কিন্তু মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোরও একটা দায়িত্ব আছে।

তিনি বলেন, প্রথমদিন ভ্যাকসিন নিতে না পারলেও দ্বিতীয় দিন যখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ভ্যাকসিন নিতে পেরেছি তখন খুবই ভালো লেগেছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনই ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমরা আসলে শুরু থেকেই এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পক্ষে ছিলাম। ভ্যাকসিন নিয়ে অপপ্রচারটা আসলে দুঃখজনক। এমনকি আমার অনেক সহকর্মীরাও মনে হয় এখনো বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। আজকেও একজন বললেন, যেহেতু ভ্যাকসিন নিয়েছি তাই আমরা যেন বাচ্চাদের কাছে না যাই। আমাদের ঘাম থেকে নাকি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এগুলো আসলে এক ধরনের আশঙ্কা থেকে ছড়ানো বিভ্রান্তি। যা দূর করা প্রয়োজন খুবই। আর সেই অপপ্রচার রুখে দিতেই আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি। বিজ্ঞানসম্মত আচরণ আমাদের সবার করা উচিত। এক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কথা বলে অপপ্রচার রুখে দিয়ে দেশের সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, দেশে যখন মহামারি চলছিল তখন একজন ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ঘরে বসে থাকার কোনো উপায় আমাদের ছিল না। আর তাই আমরা এখন পর্যন্ত একদিনও নিজেদের কাজ থেকে ছুটি নেইনি।দেশে ভ্যাকসিন আসার আগে চারিদিকে গুজব, অপপ্রচার ও নানা ধরনের রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি দেখে আসলে খারাপ লেগেছিল। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে আমি সবার আগে ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে জানাই। তখনও আমাকে অনেকে বলতে থাকে ভ্যাকসিন নিলে নাকি পুরুষ মানুষ মহিলা হয়ে যায় আবার মহিলা মানুষের নাকি মুখে পুরুষের মতো গোফ জন্মায়। এমনকি আজকে সকালেও আমাদের এক কর্মচারী আমাকে এমনটা বলছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

সবার আগে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ২৬ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছিলেন জানিয়ে ডা. মোস্তফা জামান বলেন, আমাদের ভাবনা ছিল সবার আগে ভ্যাকসিন নেব। সেজন্য ২৬ জানুয়ারি আমরা রেজিস্ট্রেশনও করি। কিন্তু সেটি আর নেওয়া হয় নাই।

তিনি বলেন, অনেকের মধ্যে ধারনা যে ভারতীয় ভ্যাকসিন কাজ করবে না। কিন্তু এটা তো ভারতীয় ভ্যাকসিন না। এটা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে। তারা বিশ্বের অন্যতম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যাদের আরও অনেক ভ্যাকসিন আমাদের দেশে দেওয়া হয়। এগুলো নিয়ে দেশবাসীকে একটা ক্লিয়ার মেসেজ দিতে না পারার কারণেও অনেকাংশে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো কাটিয়ে ওঠাটা জরুরি। আর এজন্য জনগণের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে হবে। সেজন্যেই মূলত আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার বিদেশে থাকা বন্ধুরা জানিয়েছে তারা এখনো ভ্যাকসিন নিতে পারে নাই। আমরা এ কারণে গর্বিত যে অনেক দেশের আগে ভ্যাকসিন নিতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে আমার মা বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে চাচ্ছেন আমরা কেমন আছি ও কোনো অসুবিধা হয়েছে কি না। আমার অনেক আত্মীয়স্বজনও জানতে চাচ্ছে। আমি সবাইকে বলেছি আমরা ভালো আছি। দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নাই।

দেশবাসীকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, সবাইকে আসলে একটা কথাই বলতে চাই— ভ্যাকসিন নিন। বিজ্ঞানের উপরে ভরসা রাখুন। আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি এবং আমরা সুস্থও আছি। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য কোনো ধরনের সংশয় মনের মধ্যে না রাখাই ভালো।

ডা. মোস্তফা জামানের স্ত্রী বিএসএমএমইউ’র সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা সারাবাংলাকে বলেন, ভ্যাকসিন নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এত তাড়াতাড়ি আমাদের দেশে ভ্যাকসিন চলে আসবে এমনটা আসলে আশা ছিল না। আর ভ্যাকসিন নিয়ে যে এত অপপ্রচার হতে পারে সেটাও অপ্রত্যাশিত ছিল। অথচ দেশে করোনাযুদ্ধের শুরু থেকেই চিকিৎসক হিসেবে আমরা সবাই কাজ করে গেছি। সেক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন আসা অবশ্যই আনন্দের। যখন আমরা দুইজনই একসঙ্গে ভ্যাকসিন নিতে পেরেছি সেটা তো অবশ্যই উৎসবের আনন্দের মতো লাগবে এবং সেটাই লাগছে।

তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করা উচিত। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যেও এই ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি। যারা এখনো ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধায় আছে তারা যেন পরিষ্কারভাবে একটা বার্তা পেতে পারে। ইতিবাচকভাবে পুরো বিষয়টি দেখা দরকার। কারণ আমাদের দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কিন্তু নতুন হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘ সময়ের একটা অভিজ্ঞতা আছে।

সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে কেউ অপপ্রচারে কান দিবেন না। ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়েও কেউ ভয় পাবেন না। পরিবার, সমাজ ও দেশকে মহামারি থেকে বাঁচাতে অবশ্যই ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন। আমরা সবাই যদি সচেতন হয়ে ভ্যাকসিন নিতে থাকি তবে দেশটাকে আমরা মহামারির কবল থেকে রক্ষা করতে পারবো।

আরও পড়ুন- বিএসএমএমইউ’য়ে উপাচার্যই নেবেন প্রথম ভ্যাকসিন

দেশে প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিচ্ছেন রুনু ভেরোনিকা কস্তা

প্রথম যে ৫ জন পেলেন করোনার ভ্যাকসিন  

 

সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ

টপ নিউজ ডা. মোস্তফা ও ডা. কানিজ প্রথম দম্পতি বিএসএমএমইউ ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর