কুষ্টিয়ার সেই প্রিজাইডিং অফিসারকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ
২১ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৪৪
ঢাকা: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ও তার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইজিপিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ভার্চুয়াল আদালতে যুক্ত হন, তখন তার পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বক্তব্য তুলে ধরলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি বলেন, ‘আজ ভার্চুয়াল আদালতে হঠাৎ ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি। অনেকক্ষণ ধরে সেখানে থাকায় আদালত তার পরিচয় জানতে চান। তখন ওই ব্যক্তি নিজেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী শাহজাহান আলী পরিচয় দিয়ে আদালতের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চান। তখন তার পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান বক্তব্য তুলে ধরে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাজাহান আলী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চান। আদালত তখন আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশ দেন।’
সারোয়ার হোসেন বাপ্পি আরও বলেন, ‘আদালতের লিখিত আদেশ আজকের মধ্যে আইজিপির কাছে পাঠানো হবে।’
আইনজীবী ইশরাত হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কুষ্টিয়ার এসপি এস এম তানভীর আরাফাতকে তলবের ঘটনায় গতকাল (২০ জানুয়ারি) সেই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। পরে গতকাল বিকেলে পুলিশ দৌলতপুর থানায় তাকে ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং তাকে হুমকি দেন এসপির বিরুদ্ধে কিছু বললে এই কাগজপত্র ব্যবহার করা হবে।’
পরে আজ তার বাড়িতে দুইজন ব্যক্তি সবসময় অবস্থান করছেন। এ কারণে শাহজাহান আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শাজাহান আলী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চাইলে আদালত পুলিশের আইজিপিকে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেন।
এদিকে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাজাহান আলী এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ওই বার্তায় তিনি বলেন, ‘গতকাল হাইকোর্টের অর্ডার হওয়ার পরে দৌলতপুর থানার ওসি মহোদয় আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে জোরপূর্বক বিভিন্ন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করেন। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং পলাতক অবস্থায় আছি। আমি ও আমার পরিবারসহ সকলের নিরাপত্তা চাই মাননীয় হাইকোর্টের কাছে।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী। আর শাজাহান আলী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
এর আগে বুধবার (২০ জানুয়ারি) পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে স্বপ্রণোদিত হয়ে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি (সোমবার) তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রুল জারি করেন আদালত।
পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে আসে।
জানা যায়, তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দফতরেও পাঠানো হয়েছে।
আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের সময় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখি।
তিনি উল্লেখ করেন, পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। প্রিজাইডিং অফিসাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় ওই কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০/৫০ জন ফোর্সসহ আসেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সঙ্গে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন।
মহসিন হাসান জানান, তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা শেষ হলে ওনাকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। তখন এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?
আবেদনে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেছেন, আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান। পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্যে করে একাধিকবার বলেন, এ সব লোককে কে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।
আবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে