বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ
১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:০১ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৫:৪০
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: অবশেষে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রেখেই শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার পর সোমবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত ২৪ পৃষ্ঠার এই গেজেটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে রেখেই এ গেজেট জারি করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আলোচনার পর গেজেট জারি করা হলো। আর এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের অবসান হলো।
১৩ ডিসেম্বর বুধবার এ গেজেট আপিল বিভাগের দাখিল করার জন্য দিন ঠিক করা আছে। প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, যেহেতু সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা তথা বিচার বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের ও বিচার বিভাগে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাষ্ট্রপতি এ বিধান কার্যকর করবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ইত্যাদি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শেই সরকার কার্যকর করতে পদক্ষেপ নেবে সে বিধানও রাখা হয়েছে।
বিচার বিভাগের বাইরে প্রেষণে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে সংযুক্ত করা হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়েই এটা করার বিধান করা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা অনুসন্ধান করবে মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেও মন্ত্রণালয়। তবে সেটাও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ মতো করার বিধান করা হয়েছে নতুন শৃঙ্খলা বিধিতে।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মানবাধিকার সম্মেলনে যোগ দিয়ে আইনমন্ত্রী এ বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজট প্রকাশে ১৩ ডিসেম্বর বুধবার পর্যন্ত সময় দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আপিল বিভাগ।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়।ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল আপিল বিভাগের। এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।
পরে ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু সেই খসড়া নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই