দুর্যোগে উদ্ধার প্রকল্প: পরামর্শকেই যাবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা
১১ জানুয়ারি ২০২১ ১২:০৬ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ১২:১৭
ঢাকা: ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগে উদ্ধার কাজের জন্য যন্ত্রপাতি কিনছে সরকার। এ জন্য ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শকের পকেটেই যাবে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। ১০৮ জনমাস পরামর্শকের পেছনে এ ব্যয় প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশন।
গত মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) অনুমোদন পাওয়ায় চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের ৬৪ জেলার সব সিটি করপোরেশন, ৪৯২টি উপজলা এবং ৩২৭টি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রয়োজন থাকলে সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অপ্রয়োজনেও পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়। ফলে অনেক সময় অনিয়ম করার সুযোগ তৈরি হয়। জনগণের করের এক টাকাও অপচয় করা উচিত নয়। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে কোনো ধরনের পরামর্শক ব্যয়ের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে আটকে পড়া, হারিয়ে যাওয়া এবং আহত বা নিহত মানুষের অনুসন্ধান ও উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ভূমিকম্পের সময়ে অনেক মানুষ বিধ্বস্ত ভবনের ধবংস্তুপের নিচে আটকা পড়ে বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হয় না। জরুরি সাড়ায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে জরুরি অবস্থান নিরূপণ করে সাড়া দেওয়ার প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই এ সব কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদিসহ প্রস্তুত রাখা গেলে দুর্যোগকালে মানুষের সম্পদ ও জানমাল রক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের হওয়া রিট পিটিশন নং ৯৩২৯ বা ২০০৮ অনুযায়ী রায়ের নির্দেশনা মোতাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তৃতীয় ফেজের এ প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এরমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ফেজের প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে,দূর্যোগকালে ও দুর্যোগের পরে দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জনবল নিয়োগ, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি এবং ওএন্ডএম প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া ও কারিগরি পরিদর্শন, সেড কাম স্টোরেজসহ অন্যান্য নির্মাণ ও মেরামত, দুর্যোগকালীন দেশের যে কোনো স্থানে স্থাপন যোগ্য ও স্থানান্তর উপযোগী, উচ্চমান সম্পন্ন সেলুলার কমিউনিকেশনের মাধ্যমে জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন, দুযোগকালীন ও দুর্যোগের পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ব্যক্তিকে যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া, জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে নিজস্ব যোগাযোগ সার্ভিস সম্প্রসারণ, দীর্ঘ মেয়াদি বেজড কোর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি পানি সস্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে দুর্যোগকালীন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য পেশাগত দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন ও সমন্বিত জরুরি সাড়া দেওয়া পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সম্পদহানি কম এবং জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে।’
উন্নয়ন প্রকল্প দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যন্ত্রপাতি কেনাকাটা