Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সচেতনতাই পারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে


৯ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৩৭ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:২৩

ঢাকা: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা নিকেতন-এর প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর অন্তোনেটো তারমোসআওজেন।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) সারাবাংলা.নেটের বিশেষ আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসের অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সারাবাংলা.নেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের এ পর্বের বিষয় ছিল ‘এ ট্রু ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ’।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে ডাচ নাগরিক অন্তোনেটো জানান, একটি সাইকেল ভ্রমণ পাল্টে দিয়েছিল তার জীবন। ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটারের সেই সাইকেলযাত্রাটি যখন শুরু হয়—তখন তিনি ২৬ বছরের এক উদ্যোমী নারী। ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন তাদের সেই দলটি। ১৫ মাসের সেই যাত্রায় অনেক দেশ ভ্রমণ করলেও বাংলাদেশ তার মনে গেঁথে গিয়েছিল।

সারাবাংলা ফোকাসে অন্তোনেটো জানান, প্রথম ভ্রমণেই বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেসময় মানিকগঞ্জের একটি প্রতিবন্ধী ছেলেকে আশ্বাস দিয়েছিলেন সাহায্য করার। আর সেই আশ্বাসই পরে বাংলাদেশে ফিরে আসার এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের শিবালয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।

১০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে নিয়ে একটি স্কুলের যাত্রা শুরু করেছিলেন অন্তোনেটো। এখন সেখানে পাঁচশরও বেশি শিক্ষার্থী আছে। নিকেতনের সহায়তায় বাংলাদেশে এ প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে এনজিও ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ)। এ প্রকল্পের আওতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য রয়েছে আর্লি ইন্টারভেনশন প্রোগ্রাম, স্পেশাল স্কুল, ট্রেনিং সেন্টার, হোম কেয়ার ও রেসিডেন্ট কেয়ার ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

অন্তোনেটো জানান, এসব শিশুদের জন্য কাজ করা বেশ ব্যয়বহুল। তাই তাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ খুব সহজ ছিল না। তবে গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকেও অনেক সহযোগিতা পাচ্ছেন অন্তোনেটো। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তসহ অনেকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি।

অন্তোনেটো বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সুযোগসুবিধা খুবই কম। এদের মাত্র পাঁচ শতাংশ শিক্ষার সঙ্গে ‍যুক্ত।’ বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ব্যাপারে তেমন কিছু জানে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সক্ষমতা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। এখনো প্রতিবন্ধী শিশুকে বাবা-মার জন্য সৃষ্টিকর্তার সাজা হিসেবে দেখা হয়।’

অন্যদিকে এসব শিশুদের বেশিরভাগই অস্বচ্ছল পরিবারের। সেখানে তারা নানা ধরনের অবহেলা ও হয়রানির শিকার হয়। আবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশু মেয়ে হলে এসব সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেশিরভাগ সময় যৌন হয়রানি ও শোষণের শিকার হয় তারা। তাদের শিক্ষা, বিয়ে ও মা হওয়াকে এ সমাজে নিরুৎসাহিত করা হয়।

এর কারণ হিসেবে, শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষই জানে না তাদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে তাদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা স্বাভাবিকভাবে তাদের ভাষা বোঝাতে না পারলে অসহনশীল আচরণ করতে পারে।’ তাই তাদেরকে সম্মান দেওয়া অনেক জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, ‘সঠিক প্রশিক্ষণ ও স্বাভাবিক আচরণ এসব শিশুদের জীবন পাল্টে দিতে পারে এবং সমাজকে বদলে দিতে পারে। তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’ বাবা-মা, শিক্ষক বা এসব শিশুদের নিয়ে যারা কাজ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের প্রশংসা করেন অন্তোনেটো। তবে সরকার অনেক সময় সঠিক বিনিয়োগ করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে এসব শিশুদের নিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়।’ এজন্য বেসরকারি সংস্থা ও সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জোর দেন তিনি।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে আরও বেশি-বিশেষ স্কুল গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। সাধারণ স্কুলে এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এসব শিশুরা স্বাভাবিক শিশু ও অন্যান্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারবে। এভাবে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পাবে বলেও মনে করেন অন্তোনেটো।

নিকেতনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রকল্পের বিষয়ে তিনি জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অভিভাবকদের জন্য তারা নির্দেশিকামূলক ভিডিও তৈরি করছেন। এছাড়া এসব শিশুদের অনুভূতি সম্পর্কে স্বাভাবিক শিশুদের জানাতে ‘মাই নেম ইজ লুনা’ নামের একটি বই প্রকাশনা করেছেন তারা। বইটিতে গল্পের মতো করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অনুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে। অন্তোনেটো জানান, এই বইটি বাংলাদেশের সাধারন স্কুলের ৮-১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে পারলে তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সম্মান করতে শিখবে।

অন্তোনেটো আশা রাখেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের স্কুলের পাশে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে আসলে নিকেতন বাংলাদেশে আরও অনেক কাজ করতে পারবে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আরও অনেক শিশুকে এসব স্কুলের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।

৫৪ বছর বয়সী অন্তোনেটো সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসি এবং অভাবী মানুষের জন্য ভেতর থেকে কিছু করার প্রেরণা অনুভব করি।’ আর এই প্রেরণাই তাকে ২৮ বছর ধরে বাংলাদেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করার সাহস যুগিয়েছে।

টপ নিউজ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু সচেতনতা সারাবাংলা ফোকাস

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর