পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে…
৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১৭ | আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের ডিআইজি ও ভুয়া বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে অবস্থান নেওয়া এক প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সিএমপির একটি অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে হোটেলের লবিতে বসে ওই ব্যক্তির আচরণ দেখে সন্দেহ হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়— প্রতারণার অভিযোগে একবছর আগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফের প্রতারণার ফাঁদ পেতে হোটেল র্যাডিসনে অবস্থান নেন মানবপাচারে জড়িত এই ব্যক্তি।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) রাতে মো. ফারুক (৩৫) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
গ্রেফতার ফারুক কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার সুরপুর গ্রামের মো. লোকমানের ছেলে। তার কাছ থেকে একটি জাল সিআইপি কার্ড, উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানিকে নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে প্রতারণা, ধরা ‘ভুয়া সিআইপি’
ওসি মহসীন সারাবাংলাকে জানান, সিএমপি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ফারুককে গ্রেফতার করেছিলেন। নিজেকে সিআইপি পরিচয় দিয়ে দুবাইয়ে বসবাসরত এক পাকিস্তানি পরিবারকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফারুক আবারও চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান নিয়ে একইভাবে প্রতারণা শুরু করেছে। র্যাডিসন হোটেলে এডিসি পলাশের সামনে পড়ে যাওয়া ফারুককে আবারও গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বুধবার রাতে র্যাডিসন হোটেলের বলরুমে সিএমপির নিজস্ব একটি অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হোটেলের লবিতে বসেছিলেন। এডিসি পলাশ দেখেন— ফারুক পায়ের ওপর পা তুলে চেয়ারে বসে আছেন। তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তার মোবাইলে ফোন দেন। ফারুক এডিসিকে দেখেননি তখন। তিনি জানান, কুমিল্লার বাড়িতে আছেন। তখন পেছন থেকে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। পকেটে পাওয়া যায় জাল সিআইপি কার্ড। হোটেলের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফারুক নিজেকে সিআইপি ও পুলিশের ডিআইজি পরিচয় দিয়ে মঙ্গলবার কক্ষ ভাড়া নেন। তিনি ৮০৩ নম্বর কক্ষে থাকছিলেন।
বর্তমানে নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের এডিসি পলাশ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফারুক একজন বড় ধরনের প্রতারক। আগেরবার গ্রেফতারের সময় ফারুকের কাছ থেকে সরকারি লোগো এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদারের সই করা একটি সিআইপি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছিল। এবারও একই ধরনের কার্ড পাওয়া গেছে। ফেনীতে সে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করত। সেই সুবাদে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে। ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে ভিজিট ভিসায় ফারুক আরব আমিরাতের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করত। এছাড়া ভুয়া সিআইপি কার্ড ব্যবহার করে ফারুক দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রাপ্ত সুবিধা নিয়ে বিদেশে গেছে একাধিকবার। ইমিগ্রেশনে সেই কার্ড ভুয়া হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।’
ওসি মহসীন জানিয়েছেন, ফারুকের বিরুদ্ধে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানায় আরও দু’টি মামলা আছে।