জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের ৪ দফা নির্দেশনা স্থগিত
৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৫২
ঢাকা: হাইকোর্ট থেকে কোনো আসামি জামিন পাওয়ার পর ওই আসামি জামিনের অপব্যবহার না করলে অধস্তন আদালত সেই জামিন বাতিল করতে পারবেন না উল্লেখ করে হাইকোর্টের দেওয়া এ সংক্রান্ত চার দফা নির্দেশনা স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ওই নির্দেশনার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
এর আগে চট্টগ্রামের মো. ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তির জামিন বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর চার দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের রায়ে এ চার দফা নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে
১. হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কোনো আসামি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পান, তবে জামিনের অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না।
২. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ দাখিল না করার কারণে অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না।
৩. সংশ্লিষ্ট আসামি বা ব্যক্তির জামিন বাতিল করতে হলে হাইকোর্টের যে রুল বা আপিলে জামিন পেয়েছেন, সেই রুল বা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৪. হাইকোর্ট যে রুলে বা আপিলে জামিন দিয়েছেন তা খারিজ না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না। হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলেই শুধু জামিন বাতিল করা যাবে।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের ওই রায়ে জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে চার দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ওই চার দফা নির্দেশনার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
এর আগে চট্টগ্রামে মো. আবু বকর চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তার আট বছরের ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগে মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় ২০১৮ সালের ১৬ মে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ওইদিনই পুলিশ ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে। ইব্রাহিম চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করেন। ওই আদালত তাকে জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
হাইকোর্ট একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাকে ছয় মাসের জামিন দেন এবং রুল জারি করেন। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ অবস্থায় পুলিশ তদন্ত শেষে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ইব্রাহিম ২০১৯ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রামের ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ওই আদালত তার আবেদন খারিজ করে তাকে আবারও কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। পরে ২০২০ সালের ২৬ জুন হাইকোর্ট তাকে তিন মাসের জামিন দেন।
একই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারককে তলব করেন। ওই বিচারক ১৪ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের ব্যাখ্যা দেন। পরে ২১ জুলাই লিখিতভাবে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান বিচারক। শুনানি শেষে আদালত ওই চার দফা নির্দেশনা জারি করে রায় ঘোষণা করেন।