Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিকে হালদারের অর্থপাচার: ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা


৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:০০ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:১১

ঢাকা: এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে) দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত জারি করা রুলের মামলায় পাঁচজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া আগামী ২০ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করে দিযেছেন আদালত। ওইদিন পিকে হালদারের মামলার তদন্ত ও গ্রেফতারের বিষয়ে দুদককে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবীন রব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি।

যাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তারা হলেন- ১. এস কে সুর ২. হারুনুর রশিদ ৩. উজ্জল কুমার নন্দী ৪. শামী হুদা ৫. অমিতাভ অধিকারী ৬. এমএস অবন্তিকা বড়াল ৭. এমএস শামীমা ৮. এমএস রুনাই ৯. এন আই খান ১০. সুকুমার মৃধা ১১. এমএস অবন্তিকা মৃধা ১২. তপন দে ১৩. স্বপন কুমার মিস্ত্রী ১৪. অভিজিৎ চৌধুরী ১৫. রাজিব সোম ১৬. ইরফান উদ্দিন আহমেদ ১৭. অঞ্জন মোহন রায় ১৮. নঙ্গ চো মং ১৯. নিজামুল আহসান ২০. মানিক লাল সমুদ্দার ২১. সোহেল শামস ২২. মাহবুব মুসা ২৩. একিউ সিদ্দিক ২৪. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ২৫. লীলাবতী হালদার (পিকে হালদারের মা)।

আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘আজ আবেদনকারীরা দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে সহায়তার এ মামলার সঙ্গে জড়িত ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করলে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সে আবেদন সমর্থন করেছি। শুনানি শেষে আদালত এই ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২০ জানুয়ারি এ মামলায় পিকে হালদারের বিষয়ে পরবর্তী অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং যারা পক্ষভুক্ত হয়েছেন তাদের আবেদনের ওপর ওইদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’

এদিকে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

শুনানি শেষে পিপল লিজিংয়ের কাছে পাওনাদার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে শিক্ষাবিদ নাশিদ কামাল বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীরা এ মামলার সঙ্গে জড়িত ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলাম। আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আজ আমার আব্বা সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মৃত্যুবার্ষিকী। এরকম একটি দিনে আমরা যেন ন্যায়বিচার পাই। এজন্য সবার কাছে এই দোয়া চাই।’

এর আগে পিপল লিজিংয়ের কাছে পাওনাদার এই চারজনের আবেদন হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেন। পাওনাদার এই ৫ জন হলেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে শিক্ষাবিদ নাশিদ কামাল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মেয়ে সামিয়া বিনতে মাহবুব, খালেক মনসুর ট্রাস্টের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত-উর রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হাসান।

গত ৩ জানুয়ারি আদালত তাদের এ মামলায় পক্ষভুক্ত করেন। এবং আইনজীবী ছাড়াই নিজেরাই তাদের আবেদনের বিষয়ে শুনানি করতে পারবেন বলে আদালত জানিয়েছিলেন। এছাড়া এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়া আরেকজন উত্তম কুমার নন্দীর পক্ষেও হলফনামা আকারে আবেদন গত ৩ জানুয়ারি জমা দিয়েছেন তার আইনজীবী।

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইডি) ইউনিটসহ সংশ্লিষ্টদের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

১৭ ডিসেম্বর শুনানির আগে দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, এনবিআরসহ বেশকয়েকটি সংস্থা অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তারও আগে গত ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত ও তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট। পরে এ বিষয়ে ৩ জানুয়ারি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওইদিন উজ্জ্বল কুমার নন্দী এবং অমিতাভ অধিকারী নামে দুই ব্যক্তি পিকে হালদারের এ মামলায় নতুনভাবে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করলে আদালত তাদের পক্ষভুক্ত করেন।

৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচার ও লোপাটের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গত ২ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে নিম্ন আদালত। গত ২ ডিসেম্বর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আড়াই মাস পরেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ওইদিনই বিচারিক আদালত পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বিদেশে পালিয়ে থাকা পিকে হালদারকে বিদেশ থেকে দেশে আনতে এবং গ্রেফতারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ ও গোয়েন্দা বিভাগ, এনবিআর চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। দুদক সে বিষয়ে ২ ডিসেম্বর লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেয়।

২৫ জন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক টপ নিউজ দেশ ত্যাগ নিষেধাজ্ঞা পিকে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর