পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, আড়ালে ইয়াবা গডফাদারের ‘সহযোগী’
৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:২৫ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ নাসির উদ্দিন। ব্যাগে ওষুধের স্যাম্পল নিয়ে ঘোরেন ডাক্তারের চেম্বার আর ফার্মেসিতে। সেই নাসির গ্রেফতার হয়েছেন ইয়াবার কারবারে যুক্ত বড় একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে। পুলিশ জানিয়েছে, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরির আড়ালে মূলত নাসির চট্টগ্রামের একজন ইয়াবা গডফাদারের সহযোগী। তার ব্যাগে ওষুধের সঙ্গে থাকে ইয়াবাও।
শনিবার (২ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ নাসিরকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার নাসির উদ্দিন (৪২) আনোয়ার উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের চাপাতলী গ্রামের মৃত এস এম সোলাইমানের ছেলে। অর্গানিক হেলথ কেয়ার নামে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে নাসির কর্মরত আছেন বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।
ওসি নেজাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে চট্টগ্রাম নগরী পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্কের ৯ জন সদস্যকে ইতোমধ্যে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের একজনের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাসিরকে আমরা গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির জানিয়েছেন, তিনি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নগরীতে ও কক্সবাজারে ইয়াবা পাচার করেন। আনোয়ারার ইয়াবা গডফাদার ইদ্রিস ট্রলারে করে সাগরপথে ইয়াবা আনেন। নাসির সেই ইদ্রিসের নিয়োজিত অন্যতম পাচারকারী। ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় দেড় লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলা আছে।’
ওসি আরও জানান, গত বছরের ৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আব্দুর রাজ্জাক ও মো. কামাল নামে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের একজনের কাছে একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, দু’জন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত। ইয়াবা ব্যবসার আয় দিয়ে অস্ত্র কিনে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্রি করে। আর রোহিঙ্গাদের একটি চক্র তাদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে।
গ্রেফতার রাজ্জাক ও কামালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৩ নভেম্বর নগরীর চান্দগাঁ থানার নিউ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে থেকে মো. ফোরকান ও তার স্ত্রী শামীম আরা সুমিকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ২২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪২ টাকা। এছাড়া মাসুদের বন্ধু মোবারক হোসেন (৩৮) ও দোকান কর্মচারী মো. রাসেলকে (১৮) একইদিন গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর ১৭ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ একই চক্রের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন- মো. তাহের (২৬), মো. আলী জোহর (২৮) এবং আসমা আক্তার (২২)।
‘গত ১৮ নভেম্বর গ্রেফতার ফোরকান আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানায়, নাসির নামে আনোয়ারার এক ব্যক্তি তাকে ইয়াবাগুলো সরবরাহ করেছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নাসিরের পরিচয় শনাক্ত করি। দেড় মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে আমরা অবশেষে নাসিরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। নাসির শিক্ষিত মানুষ। তার বেশভূষা দেখে আমরা ভাবতেই সে ইয়াবা পাচারের মতো কাজে জড়িত। তবে গ্রেফতারের পর নাসির সবকিছু স্বীকার করেছে’-বলেন ওসি।
নাসিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি নেজাম উদ্দিন।