মীর নাছিরকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ
৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:২৩
ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রোববার (৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
তিনি বলেন, `আপিল বিভাগ বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে জামিন দিয়েছেন।`
জামিন আবেদনের পক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল সারাবাংলাকে বলেন, `করোনা মহামারি বিবেচনায় নিয়ে আদালত সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। এর ফলে তার মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা রইল না।`
দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৮ নভেম্বর মীর নাছির বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরে মীর নাছির আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন। একইসঙ্গে জামিনও চান। এরপর ১৬ নভেম্বর জামিন আবেদনের আদেশের দিন নির্ধারিত করা হয়। পরে আদেশের জন্য ১৪ ডিসেম্বর নতুন করে দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে ১৪ ডিসেম্বর জামিন আবেদন মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করে আপিল বিভাগ। এরপর আজ জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৬ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ একই বছরের ৪ জুলাই এক রায়ে মীর নাছিরকে আলাদা ধারায় ৩ বছর ও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দুই বছরের দণ্ড দেন।
এ ছাড়া তার ছেলে মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকার অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আলাদা দুটি আপিল করেন।
হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১০ আগস্ট মীর নাছিরের এবং একই বছরের ২ আগস্ট মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে দুদক। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে মীর নাছিরকে ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলালকে দুর্নীতি মামলায় খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে মামলাটির আপিল আবেদন পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেই অনুসারে হাইকোর্টে ওই আপিল দুটির পুনরায় শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর রায় দেন আদালত।
ওইদিন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, রায়ে হাইকোর্ট তাদের আপিল খারিজ করে দেন। তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের তিন বছরের সাজা এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ১০ বছরের সাজা বহাল থাকল। ওনার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সহযোগিতার (অ্যাবেটমেন্ট) জন্য তিন বছরের সাজা বহাল থাকে। জরিমানাসহ বিচারিক আদালতে যেভাবে রায় দিয়েছিল সেটা বহাল থাকে। এখন এ রায় বিশেষ জজ আদালত ঢাকা-২ যেদিন রিসিভ করবেন সেদিন থেকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ আদেশ অনুসারে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন গত ২৭ অক্টোবর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ১ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তাকে জামিন দেন।