শিল্পনগরের জন্য হালদা থেকে পানি নেওয়ার পক্ষে মন্ত্রী তাজুল
২ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের’ জন্য হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন নিয়ে পরিবেশগত প্রভাবের আশঙ্কা নাকচ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ ব্যাপারে ‘অহেতুক ভুল বোঝাবুঝি’ সৃষ্টি করে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা না দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর রেডিসন ব্লু বে-ভিউ হোটেলে চীন সরকারের অনুদান হিসেবে পাওয়া এলইডি বাল্ব বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় সাগরতীরের ৩০ হাজার একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ স্থাপনে কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই প্রকল্পে পানি সরবরাহের জন্য ৩৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কোটি লিটার শোধন ক্ষমতার ‘মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-২’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হালদা নদীর মোহরা সংলগ্ন অংশ থেকে দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে।
দেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হলে পরিবেশগত প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় পরিবেশবিদরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। পরিবেশ অধিদফতর ও মৎস্য বিভাগেরও দ্বিমত আছে হালদা থেকে পানি উত্তোলন নিয়ে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে বক্তব্যে বলেন, ‘মীরসরাই ইকোনমকি জোন, সেখানে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের একটা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেটাকে কার্যকর করার জন্য আমাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেটা করতে গেলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সুবিধা আপনাকে দিতে হবে। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা যাবে না। দেখা গেছে হালদা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ৩৭০ কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়। সেখান থেকে ৩ দশমিক ৭ কিউসেক পানি যদি মীরসরাই শিল্পনগরের জন্য দেওয়া হয়, তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই।’
‘প্রতি সেকেন্ডে ৩৭০ কিউসেকের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৭ কিউসেক পানি যদি আপনি উত্তোলন করেন তাহলে কি অসুবিধা হবে? হালদায় মাছের প্রজনন হয় এপ্রিল, মে, জুন- এই তিন মাস। এসময় নদীতে অতিরিক্ত পানি থাকে। শুকনো মৌসুমে পানি কমে যায়। সেসময় কিন্তু মাছের প্রজনন হয় না। এখানে পরিবেশগত প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। উন্নয়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা করা দরকার। আমরা যদি না বুঝে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করি, তাহলে শেষপর্যন্ত আমাদের সবাইকে সাফার করতে হবে’-বলেন মন্ত্রী।
ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেক সময় উন্নয়ন ব্যাহত হয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির দায় সবাইকে বহন করতে হবে। মীরসরাই শিল্পনগর হচ্ছে, টানেল হচ্ছে, আরও উন্নয়ন হচ্ছে চট্টগ্রামে। বিলিয়ন ডলার ইনকাম করার সুযোগ আছে চট্টগ্রাম থেকে। তার জন্য ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না করে এখন থেকে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই সেটা করতে পারবো। একসময় রামপাল নিয়েও অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে।’
দেশের কোনো অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে না দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অবশ্যই আলাদা। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর যদি না থাকতো, তাহলে বাংলাদেশের এত প্রবৃদ্ধি আসতো না। কিন্তু চট্টগ্রামকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেখলে চলবে না। বাংলাদেশের কোনো জায়গাকে আপনি বিচ্ছিন্ন করে দেখতে পারবেন না। ঢাকার উন্নয়ন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন, কুমিল্লার উন্নয়ন সবগুলো আপনাকে সমানভাবে দেখতে হবে। কুমিল্লার উন্নয়ন যদি না হয়, চট্টগ্রাম যদি বঞ্চিত হয় তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। কালেক্টিভ এফোর্ট দিতে হবে সব অঞ্চলের জন্য।’
চট্টগ্রাম নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের নালা-নর্দমা, খাল-বিল পরিষ্কার রাখতে হবে, খালের পাড়গুলো, ওয়াকওয়ে পরিষ্কার থাকবে। তাহলে মানুষ প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারবে।’
একই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, এটা একসময় স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। চীন এই টানেল নির্মাণ করছে। চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ হচ্ছে। টানেল আর রেললাইনের মাধ্যমে পূর্বমুখী অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড়ো পরিবর্তন আসবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় যোগাযোগ কেন্দ্র।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সচিব শাকিলা ফারজানার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে চীন থেকে পাওয়া ১৩ লাখ এলইডি বাল্ব চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।