২০২০ সালে চীনের ৩ ‘বড় ভুল’
৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৫৬ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:০৩
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ার পর ২০২০ সাল জুড়েই মহামারিতে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত। তবে, চীনের নামের পাশে মহামারির মতো বিপর্যয় যেমন আছে তেমনি আছে নানান সাফল্য।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনকে বৈশ্বিক মহামারির উৎপত্তিস্থল বলা হলেও সে দেশের নেতারা করোনা মোকাবিলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মহামারি শুরুর পর এক বছরের মধ্যেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ করোনা মোকাবিলায় রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চীনের জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক।
এদিকে, মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও চীনের অর্থনীতি রয়েছে শক্তিশালী অবস্থায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানামুখী হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞার পরও সারাবিশ্ব থেকে চীনে বিনিয়োগ আসছে।
তবে, এতসব সাফল্যের পরও ২০২০ সালে চীনের তিনটি বড় ভুল রয়েছে ব্লুমবার্গ বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে।
ছোট ব্যবসায়ী
করোনার বিস্তার রোধে চীনের বিভিন্ন শহরে লকডাউন ঘোষণা করায় সেখানকার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা বাসায় বসে কাজ করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে যায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে, অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে খাবার কেনার প্রবণতায় ছোট ছোট খাবারের দোকান এবং ক্যাটারিং সার্ভিসের কর্মীরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে শুরু করেন। তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক চীনে এই খাতের সঙ্গেও সংযুক্ত ছিলেন।
এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরের মাঝামাঝিতে চীন সরকার প্রথম বিষয়টি আমলে নেয়। অথচ, এপ্রিল থেকে চীনের ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, চীনের বিভিন্ন শহরে নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতে প্রায় ১৭ কোটি অভিবাসী শ্রমিক সংযুক্ত রয়েছে। এমনকি, মহামারিতে কাজ হারানোর পর তারা বেকারভাতা পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেননি। অথচ, চীন সরকার তাদের কর্মহীন বলতে নারাজ। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রামে গিয়ে চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
জ্যাক মা
সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার নীতি চীনে নতুন কিছু নয়। তবে, চীন সরকার আলিবাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার মুখ বন্ধ করে, অন্য ধনকুবেরদের শিক্ষা দেওয়ার নীতি নিয়েছেন বলে ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিন চীন সরকার জ্যাক মার অ্যান্ট গ্রুপ (আলিপে) কোম্পানির ৩৫ বিলিয়ন ডলার আটকে দেয়। চীন সরকারে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মকানুন বদলানো হয়েছে । আর, অ্যান্ট গ্রুপ স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হওয়ার সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
অনেকের মত, এর মূল কারণ – ঘটনাটির সপ্তাহ দুয়েক আগে জ্যাক মা সাংহাইয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে খেপিয়ে দিয়েছিল। ওই বক্তব্যে জ্যাক মা চীনের ব্যাংক ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। অনেকেই বলছেন, জ্যাক মা মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এমনটি বলেছিলেন। যদিও, চীনের সরকারি কর্মকর্তারাও ব্যাংক ব্যবস্থার সমালোচনায় জ্যাক মা’র মতো শব্দ ব্যবহার করে, কিন্তু এক্ষেত্রে তার ওপর ‘শাস্তি’ নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জ্যাক মা’কে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে চীনের ধনকুবেরদের সরকারের সমালোচনা থেকে দূরে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত অক্টোবরে চীনের ব্যাংক ব্যবস্থার সমালোচনা করে জিনপিংয়ের বিরাগভাজন হয়েছিলেন এভারগ্রান্ডে গ্রুপের চেয়ারম্যান হুই কা ইয়ান। সে সময় তাকে রক্ষা করেছিল শেনঝেনের প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু, জ্যাক মা’কে কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে না আসায় একই কারণে তাকে খেসারত দিতে হয়েছে।
সরকারি ঋণখেলাপি
চীনে দুই ধরনের আর্থিক ব্যবস্থা রয়েছে তা সবাই জানেন। দেশটির বেসরকারি ব্যবসায়ীরা কোনো আর্থিক অব্যবস্থাপনার আশ্রয় নিলে তাদেরকে তলব করা হয়। কিন্তু, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর অনিয়মের প্রতি নীরব থাকে চীন সরকার।
করোনার পর চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও যেসব রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে ব্লুমবার্গ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ তালিকায় রয়েছে একটি বৃহৎ অটোমোবাইল কোম্পানি, একটি কয়লা খনি সংস্থা ও একটি চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সংস্থাগুলোর কাছে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদ থাকার পরও তারা লেনসেনের বিষয়ে সরকারি নীতি অনুসরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সব সময়েই চীনের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার কথা বললেও দেশটিতে চলমান দুই অর্থনৈতিক ধারার মধ্যে সামঞ্জস্য আনা খুবই জরুরি বলে প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে।