ভাসানচরে আরও ১৮’শ রোহিঙ্গা
২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:০৮ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১৩
চট্টগ্রাম: দ্বিতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি জাহাজ। এ নিয়ে ভাসানচরে আশ্রয় মিললো ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গার।
এ খবর নিশ্চিত করে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাবাহী জাহাজগুলো ভাসানচরে এসে পৌঁছেছে। এখন কাউন্টিং চলছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে নিতে বিকেল হয়ে যাবে।’
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে জাহাজগুলো চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর বোট ক্লাব সংলগ্ন জেটি থেকে রওনা হয়। ভাসানচরে পৌঁছায় দুপুরে। সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব রোহিঙ্গারা স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাসানচরে গেছেন। কাউকে জোর করা হয়নি।
নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত মাসে ১৬৪২ জনের একটা গ্রুপ ভাসানচরে গেছে। তারা যাওয়ার পর কক্সবাজারে তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন ছিলেন, তারা খবর পেয়েছে যে ভাসানচরে তারা ভালো আছেন। ছবিও তারা দেখেছেন। এরপর আজ ১৮০৪ জন যাচ্ছেন, যা আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি। এটা আমাদের জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। কারণ এখানে কাউকে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তি করা হয়নি। সবাই স্বপ্রণোদিতভাবে এসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, আজকের অভিজ্ঞতায় আমরা বলতে পারি, ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ভাসানচরে এক লাখ লোকের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি আমরা রোহিঙ্গাদের সেখানে নিতে পারব, সবদিক থেকেই ভালো হবে।’
এর আগে সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল নিয়ে ৩০টি বাস চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বিএফ শাহীন কলেজের মাঠে পৌঁছায়। সেখানে রাতযাপনের পর মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে বাসে করে তাদের বোট ক্লাবে নিয়ে আসা শুরু হয়।
বোট ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, ৪২৭টি পরিবারকে ভাগ করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়েছে। বাস থেকে নামার পর প্রথমে তাদের নাস্তার প্যাকেট ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়। অন্তত চারটি পয়েন্টে গণনার পর তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে তাদের নেওয়া হয় জাহাজে। ভাসানচরগামী রোহিঙ্গাদের চোখেমুখে ছিল কৌতুহল ও কিছুটা স্বস্তির ছায়া। জাহাজে তোলার পর প্রত্যেককে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করতেও দেখা গেছে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যাত্রাপথে পর্যাপ্ত খাবার প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে। ভাসানচরেও ৪-৫ দিন ধরে আমরা রান্না করা খাবার তাদের খাওয়াবো। এরপর রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংস্থা, এনজিওসহ আরও অন্যান্য সংস্থা আছে, তারাও কিন্তু সেখানে কাজ করছে। সবাই মিলে সমন্বিত প্রয়াস থাকবে।
প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলের নিরাপত্তায় ভাসানচরে তিন শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা আজ (সোমবার) থেকেই সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী পুলিশও রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দল আসার পর ভাসানচরে ৩ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করবেন। ৩ হাজার মানুষের জন্য যতটুকু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার হবে, আমরা ততটুকু করেছি।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রবেশ শুরু করেন। সেসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।