মাতারবাড়িতে ভিড়ল প্রথম জাহাজ
২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:১৯ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোসাগরের তীরে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে বাস্তবায়নাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল অতিক্রম করে প্রথমবারের মতো একটি জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। এর মধ্য দিয়ে নবনির্মিত চ্যানেলটি চালু হলো।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা জাহাজ এমভি ভেনিস ট্রায়াম্ফ মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে নোঙ্গর করেছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থেকে জাহাজটিকে স্বাগত জানান।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে যুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা জাহাজটি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নিরাপদে চ্যানেল অতিক্রম করে জেটিতে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলট জাহাজটিকে গভীর সাগর থেকে জেটিতে নিয়ে যান। ৪ দশমিক ৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। জাহাজটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা ৭৫০ মেট্রিক টন নির্মাণসামগ্রী রয়েছে। সেগুলো খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।’
২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালুর সময়সীমা নির্ধারিত আছে। তবে এর আগেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে জাহাজ আসার মধ্য দিয়ে চালু হয়েছে সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলটি। মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণের কাজ করছে জাপানের সংস্থা। নির্মাণসামগ্রীগুলো ইন্দোনেশিয়ার কারখানায় তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে সরাসরি জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছে বলে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বঙ্গোপসাগেরে যে চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটি ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৮ মিটার গভীর। জাহাজ চলাচলের পথনির্দেশনার জন্য চ্যানেলে ছয়টি বয়া চ্যানেলে স্থাপন করা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যুক্ত আছে দেশের প্রথম এই গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নে। মূলত কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে সেই পরিকল্পনা সংশোধন করে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক বন্দর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন পায়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মা’ণ প্রকল্পে মোট খরচ হচ্ছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণও এই ব্যয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। শুধু সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি সংস্থা জাইকা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সহজ শর্তে মাত্র শূন্য দশমিক এক শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সরকার যোগান দিচ্ছে দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্থায়ন করবে দুই হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দেবে।
ইতোমধ্যে জাপানের খরচে ‘গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ফিজিব্যালিটি ও প্রি-ফ্যাজিবিলিটি স্টাডিও সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য জাপানের নিপ্পন কোই নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে জাপানের আরও দু’টি এবং একটি দেশীয়সহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- জাপান পোর্ট কনসালটেন্ট, সিডিআই ও ডিডিসি। তাদের মাধ্যমে নকশা প্রণয়ন, সুপারভিশন, মনিটরিং, টেন্ডার অ্যাসিস্টেন্সসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তারা পূর্ণাঙ্গ নকশা জমা দেওয়ার পর ২০২১ সালের শেষেরদিকে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের শেষের দিকেই নির্মাণকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত আছে। দুই ধাপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম চলবে। একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ হবে প্রথমে। এরপর চাহিদার ভিত্তিতে টার্মিনাল আরও বাড়ানো হবে। ২০২৬ সালে কাজ শেষে মাতারবাড়ি বন্দরে অপারেশন শুরু হবে। তবে এর আগে ২০২৫ এর মাঝামাঝিতেই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে ধারণা করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে চার লেনের ২৬ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করা হবে। এই সড়ক যুক্ত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে। ২০২৬ সালের মধ্যেই রোড নেটওয়ার্ক তৈরিও সম্পন্ন হবে, যা বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এছাড়া রেল নেটওয়ার্কেরও ফিজিবিলিটি স্টাডি হচ্ছে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে অন্তঃত ১৫ মিটার গভীরতার বা ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।