কারাগার শুধু অপরাধীদের বন্দি রাখার জায়গা নয়: প্রধানমন্ত্রী
২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:১০
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করা। যাতে তারা ভবিষ্যতে বের হয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ২০টি ফায়ার স্টেশন, জেলা সদরে নবনির্মিত ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি এলপিজি স্টেশন’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গণভবন প্রান্তসহ ভিআইপি লাউন্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, কাজী আলাউদ্দীন রোড যুক্ত ছিল। এ প্রান্তে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
একই অনুষ্ঠানে থেকে ধ্রুবতরা উড়োজাহাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মাহাবুব আলীসহ অনেকে।
কারাগারে কারারক্ষী এবং কারাবন্দিদের জন্য জীবনমান তথা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায় তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। তারা একজন অপরাধ করে তার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা কষ্ট পায়। কারাগারে এতগুলো লোক বেকার হয়ে বসে থাকবে কেন? সেই জন্য কারাগারে তাদের ট্রেনিং করানো, তাদের কিছু পণ্য উৎপাদন করা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো, কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মানসিকতাগুলো চেঞ্জ করা, পরিবর্তন করা, তাদের কিছু ট্রেনিং দেওয়া, তাদের কিছু শিক্ষা দেওয়া এভং যেন ভবিষ্যতে বের হয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কারাগারে একটা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এ লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলার কারাগুলিকেও উন্নত করে দেওয়া হচ্ছে বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাকালে জেলা কারাগারগুলিকে ভার্চুয়াল কোর্ট যেন পরিচালনা করা যায়, কোর্টে মামলা পরিচালনা করা হয় সেইদিকেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা আইন, সবকিছুই ডিজিটালাইজড করে ফেলা হচ্ছে। যে কোনো মামলার কজলিস্ট যেটা থাকবে সেটাও অনলাইনে জানা যাবে। তা ছাড়া প্রত্যেকটা আইন জানা যাবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিখাত ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্ত কার্যক্রমগুলো যেন আরও সুন্দরভাবে-সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটি আমরা নিচ্ছি।’
মামলার রায় যেটা বের হয় সেটা ইংরেজীতে বের হয় সেটাও বাংলা করে ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের দেশের মানুষ হয়ত জানতেই পারে না বুঝতেই পারে না কী সাজা পেল, তাদেরকে আইনজীবী যেটা বোঝাই সেটাই বুঝতে হয়।
প্রত্যেকটা কারাগারকে উন্নত করে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধী হলেও মানুষের জীবন যেন ভালভাবে চলে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। কারণ আপনারা জানেন যে শুধু অপরাধ করলে যে জেলে যায় তা না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ১৯৪৮ সাল থেকে যখন রাষ্ট্রভাষার বাংলায় মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে তিনি যে প্রতিবাদ করেছিলেন সেই প্রতিবাদের কারণে তখন থেকেই তিনি যে কারাগারে যেতে শুরু করলেন। তারপরে তার জীবনের মূল সময়টা তাকে কারাগারেই কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে।’
কারাগারের জীবন সম্পর্কে জানতে জাতির পিতার কারাগারের রোজনামচা এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাগারের রান্নাবান্নার জন্য কাঠ পোড়ানো হয়। যেহেতু আমরা পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। সেজন্য আর কাঠ পুড়িয়ে রান্না না হয় তার জন্য ওখানে আলাদাভাবে এলপিজি স্ট্রেশন করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে লাইনে এরপর ওখানকার একটা স্টোরেজ ব্যবস্থা আছে। ওই স্ট্রোরেজ পাইপলাইনে কারাগারের যে সমস্ত চৌকিতে রান্না হবে প্রত্যেক চৌকিতে গ্যাস লাইন দেওয়া হবে এবং সেখানেই তাদের রান্না বান্না হবে। রান্নার জন্য সুবিধা হবে। আর আমাদের কাঠ পোড়ানোটাও বন্ধ হবে। আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে তার থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে।’
আগুন লাগার ফলে আমাদের দেশে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঢাকা শহরে বিশতলা, ত্রিশ তলা বিল্ডিং বানাবার পারমিশন দেওয়া হয়ে যায়। আমরা আরও উঁচু দালান কোঠা করার উদ্যোগ নেই। কিন্তু এর নিরাপত্তা কীভাবে হবে? এর অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা কীভাবে হবে বা উদ্ধারকাজ কীভাবে হবে অথবা ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজ কীভাবে হবে? এ ব্যাপারে তেমন কোনো আয়োজনেই ছিল না। আমরা সরকারে আসার পর থেকে একে একে সেটা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার স্টেশন থাকবে। এর বাইরে কিছু কিছু বড় ইউনিয়ন আছে, অথবা কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে সেসব এলাকার জন্য বোধহয় বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের আরও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করতে হবে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এভাবেই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া, সেটাই আমাদের লক্ষ্য বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিকভাবে মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের কারণে জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। ৯৯৯ ফোন করলে যে কোন সমস্যার দ্রুত সহযোগিতা পুলিশ বাহিনী জনগণকে দিয়ে থাকে।’
আমাদের দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণেই জন্য কাজ করা, এটিই আমাদের লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা।