হত্যা মামলাকে আত্মহত্যা বলায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:০৭ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:১৯
ঢাকা: পটুয়াখালীতে ২০১৯ সালে মেয়ে সাথী আক্তারকে হত্যার অভিযোগে জামাতা কাওসার গাজীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মেয়ের বাবা জলিল দুয়ারী। ওই মামলা বিচাররিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে থাকা অবস্থায় জলিল দুয়ারী দাবি করেন তার মেয়ে (সাথী আক্তার) আত্মহত্যা করেছে এবং এ ঘটনায় জামাতা (কাওসার গাজী) জড়িত নয়। জামাতাকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে এমন হলফনামা দাখিল করায় মেয়ের বাবার (জলিল দুয়ারী) বিরুদ্ধ ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলার একমাত্র আসামি কাওসার গাজীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) আসামি কাওসার গাজীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের অবকাশকালীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আসাদ মিয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় হাইকোর্ট আসামি কাওসার গাজীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে মিথ্যা তথ্য প্রদানের দায়ে কাওসার গাজীর শ্বশুর জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
বশির উল্লাহ আরও বলেন, ‘যদি এজাহার সত্য হয় তাহলে জলিল দুয়ারীর হলফনামা মিথ্যা আর হলফনামা সত্য হলে এজাহার মিথ্যা। এমন ঘটনায় আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পটুয়াখালীর সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাথী আক্তার মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালীর সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ। পরে জলিল দুয়ারী মেয়েকে হত্যার অভিযোগে জামাতা কাওসার গাজীসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ মামলা দায়ের করেন। এরপর পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়ালে ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল ইসলামের আদালত তিন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে কাওসার গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। কিন্তু মামলাটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে পৌঁছার পর মেয়ে হত্যায় জামাতা জড়িত নয় দাবি করে জলিল দুয়ারী আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন।’
সাথী আক্তারের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে জানায়, তার বাবা ও দাদা তার মায়ের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে তার মাকে হত্যা করেন। পরে তার বাবা ছাগল বাধার রশি দিয়ে তার মায়ের গলায় ফাঁস দেন।
মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাথী আক্তারের মাথার খুলির উপরে সামনের দিকে ফোলা জখম। তার গলায় অর্ধ বৃত্তাকার রশির দাগ, গলার ওপরে রশির দাগটি কঠিন নয়। মাথার খুলির নিচে রক্ত জমাট বাধা হ্যামাটমা ফাটা জখম।
জলিল দুয়ারী মামলার এজাহারে বলেছিলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মারধর করে আমার মেয়ে সাথী আক্তারকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে পটুয়াখালীর পৌরসভার টাউন হল বহালগাছিয়া ১নং ওয়ার্ডের বড় গাছী বাড়ির স্বামী কাওসার গাজীর বসতঘরের ভেতরে পিটিয়ে হত্যা করে কাওসার গাজীর বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন ভবনের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।’
অন্যদিকে কাওসার গাজীর জামিন আবেদনে যুক্ত করা হলফনামায় জলিল দুয়ারী বলেন, ‘আসামি আমার মেয়ের জামাই মো. কাওসার গাজী এবং অন্যান্য আসামিরা তাহার পিতা-মাতা ও ভাই। আমার মেয়ে সাথী আক্তারের গর্ভে এবং আমার মেয়ের জামাই কাওসার গাজীর ঔরষে দুটি সন্তান আছে। আমার মেয়ে সাথী আক্তার সে জামাইকে ভুল বুঝিয়া এবং তাহার সাথে রাগান্বিত হয়ে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে এবং অন্যের দ্বারা প্ররোচিত না হইয়া ঘরের দরজা আটকাইয়া গলায় রশি দিয়া আত্মহত্যা করে। উক্ত আত্মহত্যায় আমার জামাই কাওসার গাজী কিংবা তাহার বাবা-মা জড়িত নয়। আমি পরবর্তীতে কিছু কুচক্রী লোকের দ্বারা প্রভাবিত হইয়া উক্ত মামলা দায়ের করি। যা আদৌ সত্য নয়। আমার মেয়ের জামাই দুটি নাবালক সন্তানের পিতা। উক্ত সন্তানের ভবিষ্যত দেখাশোনার জন্য উক্ত মামলা আমার পরিচালনার আবশ্যকতা নাই এবং আসামিরা উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পেলে আমার আপত্তি নাই।’
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী আসাদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্ট কাওসার গাজীকে জামিন দিয়েছেন। একই সঙ্গে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
জলিল দুয়ারীর হলফনামার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জলিল দুয়ারী জামাতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তিন মাস পরেই পটুয়াখালী আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, গ্রামের কিছু লোকের প্ররোচনায় জামাতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছিলেন। আমরা আদালতকে এই বিষয়টি অবহিত করার পর আদালত আসামিকে জামিন দেন। একই সঙ্গে বাদী বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পটুয়াখালীর সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
আদালতে সাথীর মেয়ের জবানবন্দির প্রসঙ্গে আাইনজীবী আসাদ মিয়া বলেন, ‘সাথী আক্তারের মৃত্যুর পর দুই মাস মেয়েটি তার নানার বাড়িতে ছিল। তাদের শেখানো কথা সে জবানবন্দিতে বলেছে।’
চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর বাদীর উক্ত হলফনামা যুক্ত করে পটুয়াখালীর বিশেষ জজ আদালতে জামিন চাইলে আদালত সে আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর আসামি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট আসামি কাওসারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আসামি কাওসার গাজী এখন কারাগারে আছেন।