চট্টগ্রামে সংঘাতের পর ছাত্রলীগ নেতা হত্যার আসামিসহ গ্রেফতার ৫
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলার এক আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নগরীতে আওয়ামী লীগের মনোনীত এক কাউন্সিলর প্রার্থী এবং মনোনয়ন বঞ্চিত এক নেতার অনুসারীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘাতের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকায় আলমগীর হোসেন নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়, যাদের মধ্যে মো. জাহেদ (৩০) নামে একজন সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন খুলশি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব হোসেন।
আহত আলমগীর হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে লালখান বাজার ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলালের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনায় আলমগীরের ভাই জাকির হোসেন বাদি হয়ে আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলো- মো. সুমন (৩১), মো. জাহেদ (৩০), মো. ইমন (২২), মো. বাপ্পী (২৭), মো. হানিফ (৩৮), সনেট চক্রবর্তী (৩০), মো. রুবেল (৩২) এবং মো. তারেক (২৬)।
আসামিরা সবাই লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মাসুম কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন।
কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে মাসুমের অনুসারীরা আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করেছে। গত ১২ ডিসেম্বর লালখান বাজারের বাঘঘোনা এম আর সিদ্দিকী গেইটের সামনে আমার কয়েকজন কর্মীর ওপর হামলা করে তাদের মোটরসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর করে। এরপর জাহেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা গত (শুক্রবার) রাতে আমার আরেক কর্মী আলমগীরকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। আলমগীর আমার করোনায় আক্রান্ত মাকে হাসপাতালে দেখে বাসায় ফিরছিলেন। হঠাৎ করে তাদের এমন বেপরোয়া আচরণের পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে আমি জানি না।’
বেলালের বিরোধী দিদারুল আলম মাসুমের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বেলাল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মাসুম দলটির চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘লালখান বাজারে গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকবার মারামারি-সংঘর্ষ হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থী বেলালের অনুসারী কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা গত (শুক্রবার) রাতে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। যারাই সংঘাত সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।’
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রেফতার এক আসামির জবানবন্দির ভিত্তিতে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হয়, ঘটনায় জড়িতরা সবাই নগরীর লালখান বাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়।
এ মামলায় জাহেদ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে বেশ কিছুদিন জেল খাটেন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাতে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আবারও গ্রেফতার হয়। সেই মামলায়ও জামিনে বের হবার পর এবার একজনকে ছুরিকাঘাত করে গ্রেফতার হতে হয়েছে।
সুদীপ্ত হত্যা মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট ওই মামলায় দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেফতার করেছিল পিবিআই। একমাস পর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।
কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা টপ নিউজ মনোনয়ন বঞ্চিত সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা