‘যতদিন করোনা থাকবে, ততদিন মাস্ক বিতরণ’
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৩৬ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৯
ঢাকা: বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার দশম মাস চলছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৭ হাজার ২৪২ জন এবং আক্রান্ত প্রায় পাঁচ লাখ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সর্বস্তরে মাস্ক পরার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকের জন্যই ভালো মানের মাস্ক কেনা সাধ্যের বাইরে। এমনই বাস্তবতায় বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি নিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। আর এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে গাজী গ্রুপ ও রোভার স্কাউটস।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছয়টি স্থানে মাস্ক বিতরণ করা হয়। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব, মালিবাগ, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গুলিস্তান ও ফকিরাপুলসহ ছয়টি স্থানে পথচারীদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে করোনা থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এ সময় জনসাধারণকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মাস্ক সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়াশনের করোনা মিনিটির সদস্য ও বুয়েট শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ড. মোস্তফা আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকেই আমরা নানারকম সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাচ্ছি। মাস্ক বিতরণ এর মধ্যেই একটি। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মাস্ক পরার ওপর গুরুত্ব দিলেও অনেকেই মাস্ক ব্যাবহার করছেন না। গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ইউএনডিপি, এডিবি, বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ রোভার স্কাউটের প্রতিনিধি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের উপস্থিতিতে একটি ওয়েবিনারে তারা বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। দেশে যতদিন করোনা থাকবে ততদিন এই মাস্ক বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যেই রোভার স্কাউটের সহায়তায় প্রায় নব্বই হাজার মাস্ক বিতরণ করেছেন তারা।’
ড. মোস্তফা বলেন, ‘বুয়েট অ্যালামানাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানেই করোনা কমিটি গঠিত হয়েছিল। অ্যালামনাই এবং শিক্ষক সমিতির অর্থায়নে নানাধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। লকডাউন চলাকালীন টানা পাঁচ মাস তারা ৭৫ থেকে ৭৬ জন ছাত্রকে মাসিক চার হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্যও দেন। এছাড়াও পাঁচ মাস ১৮০ জন ক্যান্টিনকর্মীকে ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা করে দিয়েছে।’
আপনার যে মাস্ক বিতরণ করছেন তা কতখানি নিরাপদ?- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তফা বলেন, ‘তিনস্তরের এই মাস্কটি পরলে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে যেমন ড্রপলেট ছড়াবে না, তেমনি যিনি আক্রান্ত নন তিনিও বাতাসের মাধ্যমে ড্রপলেট গ্রহণ করবেন না।’ এতে আক্রান্ত ও সংক্রমণের হার কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সকাল দশটা থেকে রাজধানীর প্রেসক্লাবে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পালন করে একাত্তর মুক্ত রোভার স্কাউট গ্রুপের কয়েকজন সদস্য। স্কাউট লিডার রাজীব পালের নেতৃত্বে তারা ফুটপাথের পথচারী থেকে শুরু করে রিকশাচালক ও যাত্রী, বাসযাত্রীদের মধ্যেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক বিতরণ করেন।
সারাবাংলাকে রাজীব পাল বলেন, ‘যাদের মুখে মাস্ক দেখছেন না তাদেরকেই মূলত তারা মাস্ক দিচ্ছেন। মাস্কের প্যাকেটের মধ্যে একটি নির্দেশিকা রয়েছে মাস্ক পরার নিয়মসহ। তাছাড়া দেওয়ার সময় তারা মুখেও বলে দিচ্ছেন ও মানুষকে করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করছেন।’
দেখা যায়, মাস্কভর্তি বাক্সের কাছেই একটি পলিব্যাগ রাখা যেখানে মাস্কের প্যাকেট ফেলার জন্য সবাইকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ড. মোস্তফা সারাবাংলাকে জানান, শুরুর দিকে তারা প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে মাস্ক দিচ্ছিলেন। পরে স্কাউটের পক্ষ থেকে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতন করা হলে তারা কাগজের প্যাকেট করেছেন।
প্রেসক্লাবের সামনে পরনের ওয়ানটাইম মাস্কটি খুলে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মাস্ক পরছিলেন ফারুক। উত্তরায় চাকরি করা ফারুক এদিকে আসছিলেন পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে। মাস্ক পেয়ে তিনি দারুণ আনন্দিত। বিশেষ করে গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি এই মাস্কটি ধুয়ে বারবার ব্যবহারের সুবিধা থাকায় তার অনেক খরচ বাঁচবে বলে মনে করেন তিনি। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য ওয়ান টাইম মাস্ক কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই ওয়ানটাইম মাস্ক দুই/তিন দিন ধরে ব্যবহার করতেন তিনি।
সারাবাংলাকে রোভার স্কাউট লিডার রাজীব পাল বলেন, ‘এই মাস্কটি পঞ্চাশবার ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে। তাই এটি অনেকটাই সাশ্রয়ী হবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।’
তিনস্তরের গেঞ্জির কাপড়ের এই মাস্ক ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত জীবাণু ঠেকাতে সক্ষম বলে সারাবাংলাকে জানান বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ড. এ কে এম মাসুদ। তিনি বলেন, ‘ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহের এ সাইফ এই মাস্ক নিয়ে গবেষণা করেন। পরে বুয়েটে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়েই এই মাস্ক বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় অনেকগুলো প্রোজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল পিপিই ও অক্সিজেন বিতরণ, বন্যার্তদের সহায়তা করা ইত্যাদি। মূলত সরকার থেকে মাস্ক পরার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার পরই তারা মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি জোরদার করেন। ড. মাসুদ বলেন, ‘মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও সরকার একা সবাইকে মাস্ক দিতে পারবে না। তাই আমরা এগিয়ে এসেছি এবং যতদিন পর্যন্ত সম্ভব এই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
মাস্ক বিতরণ কর্মসূচির বিষয়ে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও গাজী গ্রুপের ডিরেক্টর সানিয়া বিনতে মাহতাব সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনার প্রকোপও বাড়ছে। করোনা মোকাবিলায় মাস্কের বিকল্প নেই। কেবল মাস্ক ব্যবহার করলে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। একইসঙ্গে এটাও সত্য যে, জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। এজন্য বুয়েট প্রাক্তন ছাত্র সমিতি ও বুয়েট শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এই সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।’
‘সকলেই মাস্ক পরি, করোনা জয় করি’ স্লোগানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী।
হাছিনা গাজী বলেন, ‘ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সবাই মাস্ক পরুন। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র ওষুধ মাস্ক। তাই নিজে মাস্ক পরুন, অপরকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত’।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের শুরু থেকে আপনাদের পাশে ছিলাম। এখনও আপনাদের পাশে আছি। যেকোনো সমস্যা আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।’
উল্লেখ্য, করোনা প্রতিরোধে বুয়েট ও গাজী গ্রুপের এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজকল্যাণে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ স্কাউটস।
গাজী গ্রুপ টপ নিউজ বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মাস্ক বিতরণ রোভার স্কাউটস