‘ভাস্কর্য ইস্যুতে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করা হবে না’
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৫০ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৫৫
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে ভাস্কর্য নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা শেষ করতে চাই। তবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করবো না, আবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে, সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভাস্কর্য ইস্যুতে দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া আলেমদের পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে আলেমরা বলেন, ‘তারাও জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা করেন এবং বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রস্তাব অনুধাবন করবেন। কারণ তিনি একজন খাঁটি মুসলমান।; ঈমানদের প্রস্তাব অনুধাবন করা প্রধানমন্ত্রীর ঈমানি দায়িত্ব বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ভাস্কর্য ভাঙচুর যাতে না হয় এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে অনুরোধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারা রেখেছেন। একইসঙ্গে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে যাতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও আলেমরা পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পাঁচ প্রস্তাবসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বলতে চেয়েছেন কুতুব মিনারের আদলে মূল ভাস্কর্যের স্থানে একটি মিনার নির্মাণ করা হোক। আল্লাহর ৯১ নাম সম্বলিত মিনারের নাম হবে, মুজিব মিনার। সে প্রস্তাবেই তারা জোর দিয়েছে বেশি। আমি বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান আসবে। এটা ছিলো প্রথম বৈঠক, আরও আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
মাওলানাদের কাছে সরকার এ ইস্যুতে নতজানু কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কারো কাছে নতজানু নয়। যা করে যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা সবার পরামর্শে এবং সামনেই নিয়ে থাকে। আমরা সংবিধানকে যেমন সম্মান করি তার বাইরে যেতে পারবো না, তেমনি ধর্মকে বিশ্বাস করি তা মেনে চলি। দুটোর সমন্বয় রেখে সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।’
ভাস্কর্যের কাজ চলমান তা অব্যাহত থাকবে নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে সে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তো দেখতে পাচ্ছেন কাজ চলমান রয়েছে। ভাস্কর্য থাকবে কি থাকবে না এমন কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, আমরা সে প্রস্তাব পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু এখন তো কোভিড। এর জন্য অনেক কিছুই সীমিত। প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতাও আমাদের দেখতে হবে। আমরা প্রস্তাব পাঠাবো। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সময় দেবেন কিনা তা তিনিই ঠিক করবেন।’
উল্লেখ্য, ভাস্কর্য বিষয়ে চলমান অস্থিরতা ও সাম্প্রতিক সঙ্কট নিরসনে কওমি মাদরাসার শীর্ষ আলেমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) মধ্য রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ধর্ম সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অঅতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড- হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ১২ জন আলেম অংশ নেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গওহরপুরী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা নূর আহমদ কাসেম।
এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে ৫ দফা প্রস্তাব জানানো হয়। ওই বৈঠক থেকেই সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে একাধিক মাধ্যমেও চিঠি পাঠানো হয়।