Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দলনেতা জেলে, কৌশল পাল্টে সক্রিয় ‘হামকা গ্রুপ’


১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৩ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। চারদিন আগে তাদের অন্যতম দলনেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ছয় জনের কাছ থেকে এক দশক আগে নগরী দাপিয়ে বেড়ানো দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী দল ‘হামকা গ্রুপের’ সদস্যদের ফের সংগঠিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তারা।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, রোববার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হল- নুরুল হক সজীব (২৯), মো. শহীদ চৌধুরী (২৭), আব্দুল খালেক (৪০) ও মো. ইব্রাহিম (৪২)। সজিবের কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে।

বিজ্ঞাপন

রোববার সকালে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মো. হেদায়েত বিশ্বাস সাব্বির (৪৪) নামে একজনকে। গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে অন্যতম দলনেতা মোস্তাকিন হোসেন মিঠুকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। ছিনতাইয়ের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় মিঠু আদালতের নির্দেশে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতে আছে।

গত ১৭ নভেম্বর নগরীর লালখান বাজার মোড়ে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় প্রথমে মিঠুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে একে একে বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে চট্টগ্রাম শহর দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে ছিনতাইকারী দল হামকা গ্রুপের সদস্যরা। গলায় গামছা পেঁচিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে দুর্বল করে ছিনতাই করা ছিল তাদের কৌশল। ২০১৭ সালে হামকা গ্রুপের মূল নেতা নুর আলম গ্রেফতারের পর দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছে। এরপর হামকা গ্রুপ ভেঙে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সেই গ্রুপের দুই সদস্য মিঠু ও সাব্বির পরবর্তীতে আবারও নিজেদের সংগঠিত করে। আরেক দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী সজীবের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলে আরেকটি গ্রুপ। সেই গ্রুপের সদস্যরাই গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে নগরীতে বেশকিছু ছিনতাই করেছে। তবে তারা ছিনতাইয়ের কৌশল পাল্টেছে।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ হেফাজতে থাকা মিঠু ছিনতাইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছে, তাদের গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যই সিএনজি অটোরিকশা চালাতে সক্ষম। গ্রেফতার ছয়জনের পাঁচজনই অটোরিকশা-টেম্পুর চালক। তারা ‍দুটি অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। প্রথম অটোরিকশাটি খালি থাকে, দ্বিতীয়টিতে থাকে চালকসহ চার ছিনতাইকারী। খালি অটোরিকশা যেকোনো ব্যাংকের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। টাকা তুলে কেউ একাকী বের হলে তাকে গন্তব্যস্থানের জন্য অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া হাঁকিয়ে তুলে নেয়। নির্জন কোনো স্থানে গিয়ে অটোরিকশা নষ্ট হওয়ার কথা বলে সড়কের পাশে সেটি রাখে। যাত্রীর সিটের পেছন থেকে যন্ত্রাংশ নেওয়ার কথা বলে পেছনের গ্রিলের দরজাটি খোলা হয়। তখন পেছনে আসা ‘ব্যাকআপ- অটোরিকশা থেকে তিনজন নেমে ওই অটোরিকশার ভেতরে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে জিম্মি করে ফেলে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অথবা চড়-থাপ্পড় দিয়ে, শ্বাসরোধে মেরে ফেলার ভঙ্গী করে টাকা কেড়ে নেয়। তবে তারা কখনো মোবাইল নেয় না। মাঝে মাঝে তারা নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয়ও দেয়।

মিঠু আরও জানায়, সে নগরীর কর্ণফুলী উপজেলার ফাজিল খাঁর হাট এলাকার বাহাদুর খান নামে এক যুবলীগ নেতার আশ্রয়ে থাকে। বাহাদুর কোরিয়ান ইপিজেডে সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করে। মিঠু সেই ব্যবসা দেখাশোনা করে। মূলত বাহাদুরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকার কারণে সে নির্বিঘ্নে ছিনতাইসহ অপরাধকর্ম করে বলে জানিয়েছে মিঠু।

ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিঠু জানিয়েছে, সে ১০-১২ বছর আগে একটি গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ কারখানায় চাকরি করত। ছিনতাইয়ে জড়িয়ে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। ছিনতাইয়ের টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ১২ বছরের অপরাধ জীবনে সে পাঁচবার জেলে গেছে। সর্বশেষ তিনমাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। গত তিনমাসে শুধু কোতোয়ালী এলাকায় মিঠুর নেতৃত্বে তিনটি ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাইয়ের জন্য টার্গেট করা ব্যক্তিকে তারা বলে- ধুর। পুলিশকে বলে- বিলা। এভাবে সংকেতের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করে।’

গ্রেফতার সাব্বির জানিয়েছে, সে আগে নগরীর অক্সিজেন-নিউমার্কেট রুটে হিউম্যান হলার চালাতো। এখন অটোরিকশা চালায়। তার এক ছেলে ঢাকার সায়েদাবাদে একটি মাদরাসার শিক্ষক। প্রায় ৮ বছর ধরে সে চট্টগ্রাম শহরে ছিনতাই-ডাকাতি করলেও কখনও গ্রেফতার হয়নি। গত ১৭ নভেম্বর সর্বশেষ ৪৭ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সে গোপালগঞ্জে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। ছিনতাই করা ৪৭ হাজার টাকা থেকে সে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পেয়েছিল।

মিঠু জানিয়েছে, ছিনতাই করা ৪৭ হাজার টাকা থেকে তারা পাঁচজন প্রত্যেকে ৬ হাজার টাকা করে নেয়। সাব্বিরকে দেওয়া হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বাকি টাকা তারা ছিনতাইয়ের পর ভাত খাওয়া, চা-নাস্তা এবং অটোরিকশার ভাড়া বাবদ খরচ করেছে। তারা মূলত নগরীর আগ্রাবাদ, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, জিইসি মোড় থেকে যাত্রী সংগ্রহ করে আর বেশিরভাগ সময় ছিনতাই করে সিআরবি অথবা লালখান বাজার মোড়ে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে।

সহকারী পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারীরা জানিয়েছে, সাধারণত একদিন অথবা দুইদিনে ২-৩টি ছিনতাইয়ের পর তারা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের বাড়ি রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন জেলায়। ছিনতাইয়ের পর তারা বাড়িতে চলে যায় অথবা চট্টগ্রাম ছেড়ে অন্য কোনো জেলায়। একমাস পর আবার ফিরে আসে। আবার কয়েকটি ছিনতাই করে একমাসের জন্য পালিয়ে যায়। তারা যেসব অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য ব্যবহার করে সেগুলোর নম্বরপ্লেটের একদম শেষের দু’টি ডিজিট তারা টেপ দিয়ে অথবা মুছে আড়াল করে দেয়। এর ফলে অটোরিকশা শনাক্ত করে কষ্ট হয়।

টপ নিউজ হামকা গ্রুপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর