‘একাত্তরের ফতোয়াবাজদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্য বিরোধিতা করছে’
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:১৯ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:২৩
ঢাকা: একাত্তর সালে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাফের বলে ফতোয়া দিয়েছিল, সেই ফতোয়াবাজদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের ভাবধারা-নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী পরবর্তী প্রজন্ম চায় না দেশ এগিয়ে যাক। ১৯৭১ সালে তারা ফতোয়া দিয়েছিল— পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে তারা সবাই কাফের, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইমানের বরখেলাপ, পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হচ্ছিল, তখন তার পক্ষে এই ফতোয়াও দেওয়া হয়েছিল যে এরা ‘গণিমতের মাল’, তাদেরকে ভোগ করা যাবে। যারা সেই ফতোয়া দিয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই আজকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, একটি শ্রেণিকে উসকে দিচ্ছে, ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে।’
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শেখ ফজলুল হক মনির ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এই দেশে শত শত বছর ধরে বহু ভাস্কর্য আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ইতিহাসকে ধারণ করার স্বার্থে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি। যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত হচ্ছে, তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। এটি রহস্যজনক।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই মুক্তিযুদ্ধ। যারা দেশটা চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোলের বছর বলে, তারা বঙ্গবন্ধুকেও পছন্দ করে না। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ফতোয়া দিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য কাফের, তারাই আজকে বলছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা সঠিক হচ্ছে না। এটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আবার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দুই-চার কথা বলার চেষ্টা করে। এ হচ্ছে ছলচাতুরি, তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের অপকৌশলের অংশ, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যে মৌলবাদী অপশক্তিকে পরাভূত করে, ধর্মান্ধগোষ্ঠীকে পরাভূত করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে রচিত বাংলাদেশে তাদের আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যায় না।
ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি আমার কাছে কোনো ইস্যু নয়— এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে কিভাবে দেশে ফেরত আনা যায়, দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিভাবে করা যায়, আর খালেদা জিয়ার হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা— এগুলোই উনার কাছে ইস্যু।’
বিএনপি’র উদ্দেশে ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা তো জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য সারাদেশে বানিয়েছেন। আপনাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিন। এই বক্তব্য দিতে আপনাদের এত লজ্জা কেন? অন্যথায় আপনারা এর পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে জনগণের কাছে চিহ্নিত হবেন।’
তথ্যমন্ত্রী আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘একজন মেধাবী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্ত্রধারণ করে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বীরবেশে বাংলাদেশে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অসামান্য অবদান রেখেছিল, তাদের সংগঠিত করে দেশ গঠনের জন্য তার নেতৃত্বেই যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, শেখ ফজলুল হক মনিকেও তার অন্তঃসত্তা স্ত্রী বেগম আরজুমনিসহ সেদিন হত্যা করা হয়।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্ব সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল ও স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন টয়েল।