বাবুনগরী-মামুনুল গংদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন
৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৩
ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতাসহ ভাস্কর্য ভাঙচুর ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক মো. জিশান মাহমুদ রোববার (৬ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর এই আবেদন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৯৬ ধারার বিধান অনুযায়ী পেনাল কোড, ১৮৬০-এর ১২৩/১২৪ক/৫০৫ ধারায় মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়েছেন তিনি।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের তথ্য আইনজীবী জিশান মাহমুদ নিজেই নিশ্চিত করেছেন সারাবাংলাকে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক গংদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেছি।
জিশান মাহমুদ বলেন, আমার আবেদন গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এছাড়া আমাকে অনুমতি দিলে আমিও মামলা দায়ের করব।
মামলার আবেদনে জিশান মাহমুদ অভিযোগ করেন, গত ১৩ নভেম্বর মাওলানা মামুনুল হক ঢাকার এক অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক মাহফিলে জুনায়েদ বাবুনগরীর বলেন, কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে।
জিশান মাহমুদ অভিযোগে লিখেছেন, তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়ে আসছে। এর রেশ ধরে তাদের অনুসারীরা কুষ্টিয়ায় গত শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডল এবং বাঁ হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জিশান মাহমুদ তার আবেদনে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আরেক নাম। সংবিধান স্বীকৃত জাতির জনক। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। মাওলানা মামুনুল হক ও জুনায়েদ বাবুনগরীদের প্রত্যক্ষ মদতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছে দুর্বৃত্তরা, যা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অপমানজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং তাদের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও কার্যকলাপ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিরাগ ও ঘৃণা সৃষ্টির অশুভ অভিপ্রায়ে করা হয়েছে। ফলে বাবুনগরী-মামুনুল গংরা দণ্ডবিধির ১২৩/১২৪/৫০৫ ধারার আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি লিখেছেন, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি আস্থাশীল একজন আইনজীবী তথা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও আদর্শে উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে মাওলানা মামুনুল হক গংদের বিরুদ্ধে উপরোক্তা ধারায় মামলা করতে আগ্রহী। ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আমলে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসাবে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন থাকায় আপনাদের কাছে বিনীত প্রার্থনা— মাওলানা মামুনুল হক গংদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার জন্য আমার অনুকূলে অনুমোদন দিয়ে বাধিত করবেন।
সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু বেশকিছু ইসলামি দলের নেতারা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। তারা বলছেন, ইসলাম ভাস্কর্য অনুমোদন করে না। সম্প্রতি ‘দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ’দের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ফতোয়াও দেওয়া হয় যে ইসলামে ভাস্কর্য হারাম।
এদিকে, গত ৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্যের ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডল এবং বা হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৬ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন উত্তম লাহিড়ী নামে একজন আইনজীবী। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি), জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবকে বিবাদী করা হয়েছে। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও মো. খাইরুল আলমের বেঞ্চে রিটটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগ জুনায়েদ বাবুনগরী টপ নিউজ মাওলানা মামুনুল হক মামলার আবেদন রাষ্ট্রদ্রোহিতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়