শিক্ষকের প্ররোচনাতেই ২ মাদরাসা ছাত্র ভাস্কর্য ভাঙচুর করে
৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৪৮ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৬
কুষ্টিয়া: জেলার জুগিয়া ইবনে মাসুদ মাদরাসার দুই শিক্ষকের প্ররোচণায় দুই ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। রোববার (৬ ডিসেম্বর) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই ছাত্র একথা জানিয়েছে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে জুগিয়া থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা হেটে এসে ওই দুই ছাত্র শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ছাত্রদের শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর ২ ছাত্রকে গ্রেফতার করলে তারা শিক্ষকদের নাম বলে। ছাত্রদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন-
- রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর
- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরে অংশ নেয় ২ জন
- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার
গ্রেফতারকৃতরা হলো- জুগিয়া পশ্চিমপাড়া মাদ্রাসার ছাত্র মিরপুর উপজেলার সিংপুর মৃধাপাড়ার আবু বক্কর মিঠুন (১৯), দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়িয়া গ্রামের সুবজ ইসলাম (২০), মাদরাসা শিক্ষক মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের মো. আলামিন (২৭) ও পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বামন্দী গ্রামের ইউসুফ আলী (২৬)।
খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. মো. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকদের প্ররোচণায় ছাত্ররা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। খুব অল্পসময় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ছাত্রদের পেছনে দুই শিক্ষকের মদদ দেওয়ার কথা জানা গেছে। ওই দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে পায়ে হেঁটে এসে আসামিরা ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের পর তারা আবার মাদ্রাসায় ফিরে যায়।’
পরে শনিবার সকালে আসামিরা অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের পরামর্শে পালিয়ে যায়। তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র বা কোন মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠির মদদ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিলো। যারা অসাম্প্রদায়িকতা বিশ্বাস করে না, তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে, বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ খুব দক্ষতার সাথে ঘটনার ২৩ ঘণ্টার মধ্যে সব জট খুলে ফেলেছে এবং আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে যত শক্তিশালী চক্রই থাকুক না কেন পুলিশ তা খুঁজে বের করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য হুমকি, বাংলাদেশের সম্প্রীতির জন্য হুমকি এমন কোন শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেওয়া হবে না। আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে মূল রহস্য। তবে মৌলবাদী চিন্তাধারা থেকে আসামিরা ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে এটি প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট।’
সাংবাদিকদের সামনে গ্রেফতার হওয়া মাদরাসার দুই ছাত্র জানান, ওয়াজ মাহফিলে তারা শুনেছেন ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী সেখান থেকে তারা ভাস্কর্য ভাঙচুরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কুষ্টিয়া শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ হচ্ছে দেখে শিক্ষকদের সাথে পরামর্শক্রমে তা ভাঙচুরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। এরপর শিক্ষকদের সহযোগিতায় মধ্যরাতে মাদরাসা থেকে বের হয়ে শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে মই বেয়ে ভাস্কর্য ওঠে, কাছে থাকা হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্য ভাঙচুর করে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম রাহাত কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএ তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া। আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিছিল সমাবেশ করেছে। কুষ্টিয়ায় আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ মৌলবাদী যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এছাড়া ভাস্কর্য ভাঙার বিষয় তদন্তে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাও দায়ের করেছেন।