গ্রাহকের ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি
৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:০১
জয়পুরহাট: জেলার পাঁচবিবিতে মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের সঞ্চয় এফডিআর ও কিস্তির ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। সমিতির ফাঁদে পরে নিঃস্ব কয়েক হাজার গ্রাহক ও তাদের পরিবার। তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।
পাঁচবিবি উপজেলা সমবায় অফিস ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমিতির অফিসে এখন তালা ঝুলছে। প্রায় সাত বছর আগে সমবায় সমিতি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা সদরে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ সহ সঞ্চয় আদায় কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচালক চন্দ্রলাল বাবু।
পাঁচবিবির প্রধান সড়কের তিন মাথায় দোতলা ভবনে অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। শুরু থেকে অধিক লাভের প্রতিশ্রুতিতে সমিতিভুক্ত করে সঞ্চয় আদায় করে গ্রাহকদের। পরে স্থায়ী আমানত সংগ্রহে শতকরা ১৫ টাকা মুনাফার ঘোষণা দিলে লাখ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত করেন গ্রাহকরা। কয়েক বছর আমানতের লাভের টাকা বাড়ি বাড়ি পৌঁছেও দেওয়া হয়। এরপর ছয় মাস লাভের টাকা বন্ধ করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে গত ১৪ নভেম্বর পাঁচবিবি থেকে উধাও হয় পরিচালক চন্দ্রলাল বাবু। আর সেই থেকে আমানত ও সঞ্চয়ের টাকা পাওয়ার আশায় বন্ধ অফিসের সামনে ভিড় করছেন সমিতির গ্রাহকরা।
পাঁচবিবির দানেজপুর গ্রামের নেপাল চন্দ্র জানান, তার স্ত্রী শেফালী রাণীর নামে ৬ লাখ টাকা তিনি গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সমিতিতে জমা দেন। তার স্ত্রীর ডিএসএ (ফিক্সড ডিপোজিট) নং ৮৮১। বিনিময়ে সমিতি তাকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা মুনাফা দেয়। এরপর থেকে কোনো টাকা তিনি পাননি।
কাশপুর গ্রামের নাজিউল হক বলেন, ‘বাবার পেনশনের ৬ লাখ এবং আমার সঞ্চয়ের ৭৯ হাজার টাকা ওই সমিতিতে জমা দিয়েছিলাম।’
পশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের রোজি আক্তার জানন, তিন মাস আগে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি ওই সমিতিতে রেখে ১ হাজার ৪০০ টাকা পেয়েছেন। পরে টাকা ফেরত নিতে গেলে সমিতির সম্পাদক চন্দ্রলাল তাকে যমুনা ব্যাংক পাঁচবিবি শাখার একটি চেক দেন। কিন্তু টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে চেক ফেরত দেয়। শুধু রোজি বা বাসন্তী নয় সঞ্চয় ও আমানতের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যাওয়ার এমন অভিযোগ ওই সমিতির কয়েক’শ সদস্যের।
পাঁচবিবি উপজেলা সমবায় কর্মকতা লুতফুল কবীর সিদ্দিকী বলেন, ‘সমিতির একজন মাঠকর্মীর মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। অফিস বন্ধ থাকায় সমিতির গ্রাহক সংখ্যা এবং সঞ্চয় ও আমানতের টাকার পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে বড় ধরনের তদন্তের মাধ্যমে সমিতির ধার-দেনা ও গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ ঠিক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরমান হোসেন প্রতারিত সদস্যদের মামলা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
২ কোটি টাকা কয়েক হাজার গ্রাহক গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি টপ নিউজ বেসরকারি সংস্থা সমিতির ফাঁদ