করোনা মোকাবিলায় ৩ অগ্রাধিকারে বৈশ্বিক সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৫৩ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৪৫
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব মোকাবিলায় বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভ্যাকসিন। সবার জন্য এই ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং পরে মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক সহায়তা— এই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সবার সর্বোত সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে রেকর্ড করা এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি তুলে ধরেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান ও জাতিসংঘ মহাসচিব দুই দিনের বিশেষ এই অধিবেশন ডেকেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) এই অধিবেশন শুরু হয়েছে।
অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক চ্যলেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। এসব বিষয়ে সবাইকে জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দিতে হবে। এই বিষয়গুলোতে সবার আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।
অগ্রাধিকার তিনটি বিষয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, আমাদের যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ২০৩০ সালের মধ্যে যে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জন নিয়ে গোটা বিশ্ব কাজ করছে, সেটি সমতার নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত। তাতে স্বাস্থ্যসেবায় অধিকারকে সার্বজনীন করার কথা বলা আছে। একইভাবে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। মহামারি পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে এই ভ্যাকসিন আমাদের সহায়তা করবে।
ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তি উন্মুক্ত করাকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য’ বিবেচনা করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার (মেধাস্বত্বে ছাড়) ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে এবং সুযোগ পেলে আমরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত।
কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক সহযোগিতার দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত, কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই ও সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে অন্যের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্ব এখনো এই মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় এক কঠিন সময় পার করছে। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, সব দেশে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই আসুন, আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় সমর্থ হবে।
বিশেষ এই অধিবেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংহতি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করবে বলে আশাবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারি মানুষকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরও অনেকে ক্রমেই দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সব দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে, শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রবল ধস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মহামারি আমাদের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের এবং তা আরও উন্নত করতে এ সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশও এই মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে। অনেক কষ্টে আমাদের যে অর্জন, উন্নয়ন ও সাফল্য, তাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
করোনা মোকাবিলা ও এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকার আমাদের ব্যবসায়, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর করোনার প্রভাব কমিয়ে আনতে ১৪১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।
তিনি বলেন, মার্চ মাসের প্রথম দিকে দেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষকে সহায়তা করা হয়েছে। এর জন্য সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। করোনা মহামারির সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতেও ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস।
ইউএনজিএ করোনা মোকাবিলা করোনার ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ জাতিসংঘ টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অধিবেশন ভ্যাকসিন সাধারণ অধিবেশন