আলোচনা ব্যর্থ – দিল্লিতে জড়ো হচ্ছেন আরও কৃষক
২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৩০ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:২১
ভারতের কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিক্ষোভরত কৃষক প্রতিনিধিদের আলোচনা ভেস্তে গেছে। এর মধ্যেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ থেকে আরও কৃষক দিল্লিতে এসে জড়ো হয়েছেন। খবর ডয়েচে ভেলে।
এদিকে, মঙ্গলবারের (১ ডিসেম্বর) বৈঠক থেকে কৃষকদের কাছে কমিটি গঠন করে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু, কৃষক সংগঠনগুলি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। কারণ, তাঁদের মতে, এটা সময় নষ্ট করার একটা প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়।
কৃষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকারকে নতুন কৃষি আইন প্রথমে বাতিল করতে হবে। আর ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য নিয়ে আইন করতে হবে। যার মাধ্যমে বেসরকারিভাবে যারা কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনেন, তারা এই আইন মানতে বাধ্য থাকেন।
সরকার অবশ্য কৃষকদের দাবি মানার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুই পক্ষের আবার বৈঠকে বসার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ কৃষকরা এখনও রাজধানী দিল্লি ঘিরে বসে আছেন। দিল্লিতে ঢোকার আরও একটি রাস্তা বুধবার (২ ডিসেম্বর) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির সীমান্তে ট্রাক, ট্রাকটর, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কৃষকরা বিক্ষোভ-অবস্থান করছেন।
পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা ও রাজস্থান থেকে আসা কৃষকরা এভাবেই প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকদের এই প্রতিবাদের মুখে সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু, তারা এখন কোনোভাবে কৃষকদের আন্দোলন বন্ধ বা সময় নষ্টের মনোভাব নিয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। তাই তারা সরকারের ওপর চাপ বিন্দুমাত্র কম করতে রাজি নন।
ওদিকে, উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষকদের একটা বড় দল এসে দিল্লি ও নয়ডার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে নয়ডা পুলিশ। ডিএনডি ফ্লাইওভার ও কালিন্দী কুঞ্জের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার দুইটি রাস্তা আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি ঢোকার অন্যতম প্রধান রাস্তাও আংশিক বন্ধ। ফলে দিল্লিতে ঢোকার তিনটি রাস্তা পুরো ও একটি আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। আর গোটা দুয়েক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে দিল্লিতে ঢোকার অধিকাংশ রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। যে কারণে, দিল্লি অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
কৃষকরা শুধু যে দিল্লির দোরগোড়ায় এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এবং তাতে সারা দেশে কৃষকদের কাছে একটা সরকারবিরোধী বার্তা পৌঁছাচ্ছে তাই নয়, হরিয়ানা ও রাজস্থানে এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। মোদি সরকার যদি কৃষকদের দাবি না মানে এবং তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তা হলে হরিয়ানায় বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার পতন হয়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে ডয়চে ভেলে।
এ ব্যাপারে রাজস্থানে বিজেপি’র শরিক হনুমান বেনিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষকদের দাবি মানতেই হবে। না হলে, কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। কৃষকদের প্রতি মোদী সরকার যে ব্যবহার করেছে, তা নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভ তিনি গোপনও রাখেননি। ফলে বিজেপি’র শরিক দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে।
অপরদিকে, ভারতের বিরোধী দলগুলোও কৃষকদের পাশে থেকে সরকারকে আক্রমণ করছে। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, মোদি সরকারকে ধিক্কার জানাই। তারা কৃষকদের প্রতি যে সংবেদনহীন ব্যবহার করেছে, তা ভাবা যায় না। কৃষকরা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছেন। আমরা সকলে তাদের পাশে আছি।
এছাড়াও, বাম দলগুলোর কৃষক সংগঠনও এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠনও কৃষকদের সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। যোগেন্দ্র যাদবের স্বরাজ পার্টিও বিক্ষোভের পক্ষে রয়েছে।