অসুস্থ বাবা, ওষুধের খরচ জোগাতে ভ্যান চালাচ্ছে ৪র্থ শ্রেণির সম্পা
১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৩২ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৩২
জামালপুর: অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে রাস্তায় ভ্যান চালাচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ১০ বছরের সম্পা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে বাবার চিকিৎসা আর সংসারে খরচ। সম্পা খাতুন জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের ভ্যানচালক মো. ভাসানীর ছোট মেয়ে।
১০ বছর বয়সের সম্পা খাতুন জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে সম্পা ছোট। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন ভাসানী। ৫ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় এক পা ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করেও ভালো হয়নি তার পা।
গত দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছেন ভাসানী। প্রতিদিন তার ওষুধ লাগে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার। দেড় বছর আগে থেকে বাবার ওষুধের টাকা জোগাড় আর সংসারের হাল ধরতে ভ্যান চালানো শুরু করেন শিক্ষার্থী সম্পা।
সম্পা জানায়, প্রতিদিন সকালে সে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। দু’তিনশ টাকা আয় হলে সে বাড়ি ফেরে। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কেনা আর সংসারের খরচ চালানো হয়।
সম্পার মা নেবুজা বেগম জানায়, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য আরও অন্তত ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই অর্থ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে সবজি বিক্রী শুরু করেছেন নেবুজা বেগম। কিন্তু টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না, চিকিৎসাও হচ্ছে না।
শিশু সম্পার ভ্যানে ওঠা যাত্রীরাও অন্যদের তুলনায় তাকে বেশি ভাড়া দিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে পরিবারটিকে সহযোগিতা করেন প্রতিবেশিরাও। ভ্যান যাত্রী মারুফ হোসেন জানান, সম্পার ভ্যানে উঠে খুব খারাপ লেগেছে। ভাড়া দেওয়ার সময় ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা দিয়েছি। সাধ্য থাকলে আরও বেশি দিতাম।
সম্পার বাবা ভাসানী জানান, ৫ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়িতে ফেরার সময় স্থানীয় টিউবওয়েলপাড় মোড়ে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনি ভ্যান নিয়ে ছিটকে নিচে পরলে ডান পা ভেঙে যায়। এরপর থেকে চিকিৎসা চলছে। পা ভালো করতে আরও টাকার প্রয়োজন। এখন ঘরে শুয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। মেয়েটাই তাকে এখন বাঁচিয়ে রাখছে।
নাকাটি গ্রামের হযরত আলী জানান, দেড় বছর আগে সম্পা একবেলা স্কুল করে পরের বেলা ভ্যান চালাতো। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর এখন প্রায় সারাদিন ভ্যান চালায় সম্পা।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন জানান, সদর উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির খবর নেবেন এবং সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়াবেন। ভ্যানচালক শিশু শিক্ষার্থীর পরিবারের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন এমন প্রত্যাশাও করেন তিনি।