Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাত্তোলী বিল হয়ে যমচুগ— জল-পাহাড়ের মিলনমেলা


২৭ নভেম্বর ২০২০ ১২:১৭ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ১২:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩শ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহার। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিংবদন্তি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পরামর্শেই এই বিহারের প্রতিষ্ঠা। বনভান্তের শিষ্য-অনুসারীসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে রীতিমতো এক তীর্থস্থান। তবে কেবল ধর্মীয় কারণেই নয়, কর্ণফুলী ও চেঙ্গী নদীর মাঝের পাহাড়ি উপত্যকায় গড়ে ওঠা এই বিহার ও এর আশপাশের এলাকা রীতিমতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার।

বিজ্ঞাপন

গন্তব্য ছিল সেই যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র। এই যমচুগে যেতে হলে অবশ্যই ‘কাত্তোলী বিল’ দিয়ে যেতে হবে। তাই আমাদের আগেই দীঘিনালা থেকে পিকআপ ও লংগদু থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করা হয়েছিল। দীঘিনালা কার্বারিটিলা থেকে দুপুর ১টায় শুরু হলো পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় প্রায় দুই ঘণ্টা পথ। আমাদের লংগদু পৌঁছাতে প্রায় ৩টা বেজে গেছে। লংগদু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নৌকা ঘাটে অপেক্ষায় ছিল ভাড়া করা ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। সে নৌকায় শুরু হলো আমাদের যমচুগের উদ্দেশে যাত্রা।

বিজ্ঞাপন

ট্যুরের সঙ্গীরা কেউ নৌকার ছাদের ওপর, কেউ নৌকার ভেতরে সিটে বসেছে। স্বচ্ছ নীল জলরাশির বুক চিঁরে এগিয়ে চলেছে আমাদের নৌযান। শুরু হলো আড্ডা। লংগদু থেকে নৌকায় পানি পথে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পৌঁছে গেলাম ‘কাত্তোলী বিলে’। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও নৌকা। মাছ ধরতে ফেলা হয়েছে জাল। একেকটি নৌকায় মৎস্যশিকারীরা যেন ধ্যানে মগ্ন।

জানা গেল, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির সময় জন্ম নেয় এই কাত্তোলী বিল। চারপাশে পানি আর পানি। মাঝখানে ছোট্ট একটি দ্বীপকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বসতি। সেখানেই কাত্তোলী বাজার। দ্বীপের অধিবাসী প্রায় সবার পেশাই মাছ শিকার। রাঙ্গামাটি শহর থেকে লংগদু ও বাঘাইছড়ি এবং বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা থেকে রাঙ্গামাটি নৌরুটে এই দ্বীপের দেখা মেলে।

দ্বীপ আর কাত্তোলি বাজারে কিছু সময় কাটিয়ে আমরা তখন যমচুগমুখী। সূর্য তখন অস্ত যায় যায়। পশ্চিমের আকাশে হেলে পড়া কোমল সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে লেকের স্বচ্ছ পানিতে। একদিকে সেই সোনালি সূর্যের আভা, অন্যদিকে লেকের বুকে জেলেদের নৌকার বহর— গোটা পরিবেশটা যেন ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে উঠে আসা ছবির মতো!

এসব ‘ছবি’ পেরিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে কেটে গেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। ততক্ষণে আমরা যমচুগের নৌঘাটে। সেখান থেকে শুরু হলো নতুন যাত্রা। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে পড়েছে এই যমচুড় বনাশ্রম ভাবনাকেন্দ্রটি। মহাস্থবির বনভান্তের নির্দেশনায় ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিহার।

ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। কিছুক্ষণ পর সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে উদ্বোধন করা হলো ‘বেইন বুনা’। দেখতে দেখতে পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিহার প্রাঙ্গণ। সেখানে রাত্রিযাপন করে পরের দিন ২৪ নভেম্বর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সকালের পর্বে অংশগ্রহণ করে দুপুর ১২টার দিকে আবার দীঘিনালার উদ্দেশে যাত্রা।

যমচুগের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  প্রায় শত বছর আগে সেখানে যম নামে এক তান্ত্রিক বসবাস করেছিলেন। তার নামানুসারে এই বিহারের নাম যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র নামকরণ করা হয়েছে। ঘন বন-জঙ্গল ছিল। পরবর্তী সময়ে বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির (ভান্তে) সেখানে সতের বছর ধ্যান করেছিলেন।

যমচুগে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে তাদের সব জমি পানিতে ডুবে যায়। অসহায় হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। পাহাড়িরা উদ্বাস্তু হয়ে বিভন্ন জায়গায় আশ্রয় নেন। কাপ্তাই বাঁধের কারণে ধানের জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় একমাত্র ভরসা এখন জুম চাষ। তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় এর মাধ্যমেই। পাশাপাশি ফলজ বাগান করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চলছে বলে জানান স্থানীয়রা।

দুপুর ১২টায় যমচুগের নৌঘাট থেকে ফের যাত্রা শুরু করি দীঘিনালার পথে। ফেরার পথে কাত্তোলী বিলে দেখা মিলল অতিথি পাখির দল। অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে উল্লাসিত সবাই। গতবছরও এসেছেন যমচুগে— এমন কয়েকজন সফরসঙ্গী জানালেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অতিথি পাখির দেখা মিলেছে কমই। কিন্তু কী কারণে, তা জানা নেই। তবে কাত্তোলী বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পানকৌড়ি, বড় সরালি, ছোট সরালি, টিকি হাঁস, গাঙচিল, চ্যাগাসহ নানা প্রজাতির পাখির ঝাঁক মুখর করে রাখে বিলকে। তাই কেবল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই নয়, কাত্তোলী বিল আর যমচুগ বিহারসহ গোটা এলাকার জল-পাহাড়ি সৌন্দর্যের টানে এখন অনেকেই ছুটে আসছেন এই এলাকায়। ফেরার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিমসগ্ন সৌন্দর্য।

কাত্তোলী বাজার কাত্তোলী বিল টপ নিউজ বৌদ্ধ বিহার যমচুগ যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর