করোনায় কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ: বাণিজ্যমন্ত্রী
২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৪৮ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৫৩
ঢাকা: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা কেবল নয়, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে কর্মসংস্থান তৈরির চেয়েও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে বিদ্যমান কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হলেই কেবল দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্ববর) রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ’ বিষয়ে সিরিজ মতবিনিময় সভার অংশ হিসেবে প্রথম এই সভা আয়োজিত হয়।
সভার প্রতিপাদ্য ছিল ‘কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতির সামগ্রিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা’। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাস্ট্রদূত ইতো নাওকি, বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন, বিজিএমই সভাপতি ড. রুবানা হক, সানেম নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় মানুষ সচেতন হচ্ছে, ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্বলিত প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির জন্য এসব পদক্ষেপ খুবই প্রয়োজন ছিল। সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, এ সময়ে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে। প্রয়োজনে টিসিবি’র মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। ফলে কঠিন পরিস্থিতিতেও দেশে কোনো পণ্যের সংকট হয়নি বা মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চীনে কোভিড-১৯ শনাক্তের পর ৮ মার্চ বাংলাদেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। দেশে ৬৬ দিন সরকারি ছুটি কার্যকর ছিল। অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে নিতে হয়েছে অনেক পদক্ষেপ। সে কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা অনেকটাই সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ছিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। করোনাকালীন অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এসব প্রণোদনা প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনাকালীন সরকারের ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে সহায়তা করেছে। তবে এসএমই খাতে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার অর্থ সময়মতো ছাড় দিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এই খাতে মাত্র ৩০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এই খাতে ঋণ দিতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সরকারের নজর দিতে হবে।
রুবানা হক বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকার তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য স্যালারি প্যাকেজ ঘোষণায় এই শিল্প খাত অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রোটেকশন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালীন অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। এসব কারখানা পুনরায় চালু করতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, করোনাকালীন ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সরকার ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এখন পর্যন্ত মোট প্রণোদনার ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৪৫ শতাংশ এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প খাতের। এই খাতে প্রণোদনার জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে। এই খাতে দ্রুত অর্থ ছাড় করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
করোনা করোনাভাইরাস কর্মসংস্থান টপ নিউজ টিপু মুনশি ড. আহমদ কায়কাউস প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণোদনা বিতরণ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বাণিজ্যমন্ত্রী মতবিনিময়