Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেডিএস গ্রুপের ‘রোষানলে’ একবছরে ২৬ মামলা


২৫ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৫১ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের ‘রোষানলে পড়ে’ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক কর্মকর্তা একবছর ধরে কারাবন্দি হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে এক বছরে ২৬টি মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছে তার পরিবার। কারাবন্দি ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

কারাবন্দি সন্তানের মুক্তি চেয়ে এবং মামলা-হয়রানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

কারাবন্দি মুনির হোসেন খাঁন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁনের ছেলে। মুনির চট্টগ্রামের সেন্টপ্লাসিডস স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর আমেরিকায় পড়ালেখা করেন। পরে আমেরিকার ফ্লোরিডায় ‘ব্যাংক অব আমেরিকায়’ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ‘কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান আমার ছেলে মুনিরের স্কুলজীবনের বন্ধু। তার অনুরোধে ২০০৭ সালে সে দেশে এসে কেডিএস গ্রুপের কে ওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে। পরে তাকে নির্বাহী পরিচালক থেকে পেইড ডিরেক্টর করা হয়। তার মেধা ও শ্রমে কে ওয়াই স্টিলের মুরগী মার্কা ঢেউটিন দেশে শীর্ষস্থান অর্জন করে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন বড় অঙ্কে গিয়ে দাঁড়ায়।’

মুনির হোসেন খাঁনের রোষানলের কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে কে ওয়াই স্টিলের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার গুরুতর তথ্য তুলে ধরেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটু (হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত) কে ওয়াই স্টিলের অন্যতম মালিক। কারাবন্দি থাকায় তিনি নিয়মিত জেলখানায় বসে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক নীতিনির্ধারণী সভা করতে থাকেন। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বিকেলে কে ওয়াই স্টিলের অ্যাকাউন্টস ইনচার্জ ইমরান হোসেন এবং মহাব্যবস্থাপক আব্দুল কালামসহ ১০ কর্মকর্তাকে নিয়ে জেল সুপারের অফিসের পাশে কনফারেন্স কক্ষে বসে বোর্ড মিটিং করেন।’

বিজ্ঞাপন

‘মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে টিটু প্রায় একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মারধর করেন মুনিরকে। এসময় মুনিরকে কিল, ঘুষি, লাথি মারা হয়। মারধর করার সময় মুনিরকে টিটু হুমকি দিয়েছে— তুই যদি কেডিএস গ্রুপের আশপাশে যাস, তোকে এবং তোর সন্তানকে শেষ করে দেবো,’— বলেন মোয়াজ্জেম।

ভয়ে মুনির হোসেন খাঁন এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিলেও বন্ধু সেলিম রহমানকে ইমেইলের মাধ্যমে পুরো বিষয় অবহিত করে বলে জানান তার বাবা। তিনি আরও জানান, বারবার খলিলুর রহমান ও সেলিম রহমানের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে তিনি ২০১৮ সালের ২০ জুন ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর প্রায় দেড়বছর বেকার থাকেন মুনির। ২০১৯ সালে তিনি অ্যাপোলো স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি কে ওয়াই স্টিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। এরপরই মূলত কেডিএস গ্রুপের রোষানলে পড়ার অভিযোগ করেন মুনিরের বাবা।

এক বছরে মুনিরের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা ও গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রথমে ওই কোম্পানি থেকে চাকরি ছাড়ার জন্য কেডিএস গ্রুপের লোকজন হুমকিধমকি দেয়। এতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশকে ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর কেডিএস গ্রুপ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি গাড়ি চুরির মামলা দেয়। ওই মামলায় জামিনের জন্য আদালতে উপস্থিত হলে আরও দুইটি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেলে পাঠানো হয়। সেই থেকে মুনির জেলে আছে। তার বিরুদ্ধে গত একবছরে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় পাঁচটি, ঢাকার গুলশান থানায় একটি এবং আদালতে মোট ২০টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় জামিন হলে তার আগেই আরেকটি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গাড়ি চুরির মামলায় বায়েজিদ থানা পুলিশ তাকে তিন বার রিমান্ডেও নেয়।’

‘প্রায় সব মামলার অভিযোগ একইরকম— প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ। মুনিরকে হয়রানির জন্য এরই মধ্যে মার্কিন দূতাবাস উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। এরপরও একের এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। এতে আসামি করা হচ্ছে আমাকে এবং আমার আরেক ছেলেকেও। আমার বয়স এখন ৭৭ বছর। আমি চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আমার ছোট ছেলে আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে। কেডিএস’র সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। অথচ এসব মামলায় আমাদেরও আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে,’— বলেন মুনীরের বাবা মোয়াজ্জেম।

তিনি আরও বলেন, ‘তারা টাকার বিনিময়ে প্রশসানের একটি অংশকে ব্যবহার করে আমাদেরকে হয়রানি করছে। আমাদের পুরো পরিবার আজ বড় অসহায়। বন্ধুর অনুরোধে আমেরিকার মতো উন্নত দেশের জীবনযাপন এবং সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ফেলে বাংলাদেশে এসে তার আজকের এই পরিণতি। তার দুই সন্তান ও স্ত্রী আজ অমানবিক জীবনযানপন করছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি— আপনি হস্তক্ষেপ করে এই অসহায় পরিবারকে রক্ষা করুন।’

কে ওয়াই স্টিল মিলস কেডিএস গ্রুপ টপ নিউজ সংবাদ সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর