সিঙ্গাপুরে ফ্রান্সবিরোধী বক্তব্য: ১৫ বাংলাদেশিকে ফেরত, আটক ১
২৪ নভেম্বর ২০২০ ২১:৫১ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৩২
ফ্রান্সে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে দেশটির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্যের জের ধরে ১৫ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর। এছাড়া সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে দেশটি।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের খবরে বলা হয়, আহমেদ ফয়সাল নামে ওই বাংলাদেশিকে গত ২ নভেম্বর আটক করা হয়েছিল। ধর্মের পক্ষ নিয়ে সহিংতার অভিযোগে তাকে আটকের সেই খবর আজ (মঙ্গলবার) নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট ও মন্তব্যের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এবং সম্ভাব্য উগ্রবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছিল তারা। এর মধ্যে ১৪ জন সিঙ্গাপুরের নাগরিক, ২৩ জন অন্যান্য দেশের।
অনুসন্ধানের আওতায় থাকা এসব ব্যক্তি ফরাসি স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যাকে সমর্থন করছিল বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা আরও বলছে, ওই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের জের ধরে ফ্রান্সসহ অন্যান্য জায়গায় হামলার বিষয়েও তারা উসকানি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফ্রান্স ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বিরুদ্দে সহিংস হয়ে ওঠার উসকানি এবং মুসলিমদের নিয়ে অমর্যাদাকর বক্তব্য প্রচারের অভিযোগও ছিল কারও কারও বিরুদ্ধে।
সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ বলছে, অনুসন্ধান শেষে মোট ১৬ ব্যক্তিকে সিঙ্গাপুর থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনই বাংলাদেশি। বাকি একজন মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়ে সিরিয়া বা ফিলিস্তিন যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা গেছে।
১৫ বাংলাদেশি নাগরিক সম্পর্কে সিঙ্গাপুর সরকার জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই নির্মাণ শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন মন্তব্যের মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দেওয়ার কাজে জড়িত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় বলেছে, বিদেশি যে ২৩ নাগরিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছিল, তাদের মধ্যে বাকি সাত জনকে (১৬ জনকে ফেরত পাঠানোর পর) নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তবে এই ২৩ জনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ধরনের মন্তব্য বা বক্তব্য সমর্থন করলেও তাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্ভবত যোগাযোগ ছিল না। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরেই কোনো বিক্ষোভ বা হামলার পরিকল্পনাও তাদের ছিল না বলে এখন পর্যন্ত তথ্যে জানা গেছে।
এদিকে, সিঙ্গাপুরের যে ১৪ নাগরিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, তাদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ, চার জন নারী। তাদের বয়স ১৯ থেকে ৬২ বছরের মধ্যে।
মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক মন্ত্রী কে. শানমুগাম এক সেমিনারে বলেন, সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্স দু’টিই সেক্যুলার রাষ্ট্র। দুইটি দেশেই ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে আমাদের দুই দেশের মধ্যেও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। সেক্যুলার সরকার হিসেবে আমাদের সব ধর্মকে নিরপেক্ষভাবে দেখতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের এটিও দেখতে হবে— কেউ যেন কোনো ধর্মকে অপমান বা আক্রমণ না করতে পারে।
টপ নিউজ দেশে ফেরত ফ্রান্সবিরোধী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাম্প্রদায়িকতা সিঙ্গাপুর